ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে গলায় যদি প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তবে তা অনেক কমে যায় গরম জলের তাপে। ফাইল চিত্র
করোনায় সংক্রমিত হলে, কেউ বলছেন গরম জলের ভাপ নিতে। কেউ বা নুন জলে গার্গল করতে বলছেন। আবার কেউ বলছেন কুলকুচি করা সেই জল কোথাও ফেললে তার থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে ঘরে। ফলে এ সব না করাই ভাল। এমনকি, এক পাত্রের জলে ভাপ নিলেও একজনের থেকে আর একজনের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ। কিন্তু এত আলোচনা কীসের জন্য? ভাপ নিলে আর গার্গল করলে কি আদৌ করোনা সেরে যায়?
সব বিষয়ে বচসায় জড়ানোর আগে জেনে নেওয়া দরকার, গার্গল করলে যে সেরে যাবেই রোগ, এখনও পর্যন্ত এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে চিকিৎসকেদের বক্তব্য, গলা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে শরীরে ঢোকে ভাইরাস। রক্তে তা মিশে যাওয়ার আগে গরম জলের ভাপ খানিকটা সাহায্য করতে পারে গলাতেই তা নষ্ট করে দিতে। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, ‘‘করোনায় সংক্রমিত মানুষের শরীর দুর্বল থাকে। এ সময়ে শুধু করোনাভাইরাস নয়, অন্যান্য ব্যাক্টিরিয়া-ভাইরাসও অনেক সময়ে সুযোগ বুঝে শরীরে ঢোকার চেষ্টা করে। গরম জলের ভাপ নিলে এবং গার্গল করলে সে সব থেকে খানিক মুক্তি মেলে।’’ ফলে করোনায় অনেকটাই কাজ দেয় গরম জলে ভাপ আর গাগর্ল।
তবে সব সময়ে যে এই টোটকা কাজ করবে, এমনও নয়। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের বক্তব্য, ‘‘সকাল আর বিকেলে হয়তো গার্গল করলেন। সকালে গার্গল করার পরেই যদি জীবাণু ঢোকে, তা বিকেল পর্যন্ত গলায় অপেক্ষা না-ও করতে পারে। তার আগেই হয়তো শরীরে মিশে গিয়েছে ভাইরাস।’’ সে ক্ষেত্রে রোজ ভাপ নিয়ে আর গার্গল করেও হয়তো আর আটকানো যাবে না সংক্রমণ।
তবে শুধু ভাইরাসমুক্ত হওয়ার আশায় গরম জলের ভাপ নিতে বা গার্গল করতে বলা হচ্ছে না। সুবর্ণবাবু বলেন, ‘‘ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে গলায় যদি প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তবে তা অনেক কমে যায় গরম জলের তাপে।’’ অরুণাংশুবাবুও এ বিষয়ে একমত। তাঁর বক্তব্য বারবার গার্গল করলে এবং ভাপ নিলে আরাম পাবেন রোগী।
কিন্তু গার্গল করলে যদি অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ায়, তবে কি তা করা উচিত? চিকিৎসকদের বক্তব্য, সংক্রমিত ব্যক্তি নানা ভাবেই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। তাঁর কাছে যাওয়া ঠিক নয়। ফলে গার্গল করলে আলাদা ভাবে তা আতঙ্কের হবে না।
অর্থাৎ, গার্গল করে বা ভাপ নিয়ে শরীর ভাইরাসমুক্ত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ না থাকলেও, তা করা জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। কারণ, তা ভাল থাকতে সাহায্য করবে রোগীকে। আর তা ঘিরে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর কারণ এখনই দেখা যাচ্ছে না।