সিমা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ‘আর্ট মেলা’। —নিজস্ব চিত্র।
সময় কী বলছে? তা ধরে রাখে শিল্প। সে শিল্প যদি হয় নানা স্তরের, নানা প্রান্তের শিল্পীদের হাতে তৈরি, তবে তাতে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় সময়ের ভাবনা। সিমা গ্যালারির ‘আর্ট মেলা’ এ সময়ের সেই ছবিই তুলে ধরছে সযত্নে।
এককালে শিল্প মানেই ছিল সাধারণের আয়ত্তের বাইরে। আর শিল্পের ধারণাও যেন ছিল না স্পষ্ট। ফলে ঘরে ঘরেও যে শিল্পের ঠাঁই হতে পারে, তা ভাবার চলই ছিল না তেমন। কিন্তু সময় বদলেছে। শিল্পকাজের টানও নানা ভাবে বিভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সেই টান আরও বাড়িয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে কলকাতার এই গ্যালারি।
বছর বছর ‘আর্ট মেলা’ আয়োজন করে দক্ষিণ কলকাতার সিমা গ্যালারি। সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে শিল্পকর্ম পৌঁছে দেওয়াই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। আর সেখানেই এ বারের সংগ্রহ বলে দিল, কী ভাবে সময়ের কথা বলে ছবি। প্রতি বারের মতো প্রবীণ শিল্পীদের কাজের সঙ্গেই এই মেলায় জায়গা করে নেয় নবীন শিল্পীদের হাতের কাজ। নানা ধরনের পেন্টিং রয়েছে এ বারের মেলায়। যোগেন চৌধুরী, পরেশ মাইতি, লালুপ্রসাদ সাউ জয়শ্রী বর্মণের কাজ যেমন আছে, তেমনই আছে সুমন চন্দ্র, সত্যজিৎ রায়, সুবীর দে, শান্তনু রায়ের মতো শিল্পীদের কাজ। আর বিশেষ করে নবীন শিল্পীদের কাজে উঠে এল সময়ের ভাবনা, এ কালের রং। পরিবেশ সচেতনতা থেকে সমসাময়িক সামাজিক পরিস্থিতি, ধরা রইল পেন্টিংয়ে। সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকারও সে কথা আলাদা করে মনে করালেন। তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের পর পর যে সব কাজ দেখেছি, অনেকের মধ্যেই খানিকটা মনখারাপ, চিন্তার ছাপ ছিল। এখন যেন সেই সঙ্কট-সংশয় কাটিয়ে উঠছে সমাজ। তাই এ বারের যে সব ছবি এসেছে মেলায়, তার অনেকগুলির মধ্যেই রং অনেক বেশি। আনন্দের ছাপ আছে অনেক ছবিতেই।’’ অধিকর্তা জানান, সাধারণ মানুষের মনের কথা বলে যে ধরনের শিল্পকাজ, আর্ট মেলায় তেমন জিনিস রাখার চল সব সময়েই রয়েছে।
আর্ট মেলা ঘুরে দেখতে এসেছিলেন পরিচালক অপর্ণা সেন। বিভিন্ন শিল্পীর পেন্টিং মন দিয়ে ঘুরে দেখেন। সাধারণের সাধ্যের মধ্যে এত পেন্টিং, স্কেচ, গ্রাফিকের কাজ দেখে মুগ্ধ তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘সিমা খুব ভাল একটা কাজ করছে। ভালবাসার জিনিস তো সব সময়ে সাধ্যের মধ্যে থাকে না। যেমন আর্ট বা চিত্রকলা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরেই থেকেছে অধিকাংশ সময়ে। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে যদি এই বিভেদ তৈরি হয়, তা হলে সেটা ভাল নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, তবে আর্ট ব্যাপারটা কী? নামী শিল্পীর সই থাকলেই কি সেটা আর্ট হয়ে যায়? কিন্তু এই আর্ট মেলা সেই ধারণাটা বদলাচ্ছে। যাদের শিল্পের প্রতি টান রয়েছে, কিন্তু অতটাও সাধ্য নেই, তাঁরাও শিল্পকর্ম হাতের কাছে পাচ্ছেন।’’
আর্ট মেলা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। চলবে রবিবার পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের পেন্টিং, ইলাস্ট্রেশন, ড্রইং, স্কেচ রয়েছে এখানে। বালিগঞ্জ এলাকার সিমা গ্যালারিতে গেলেই দেখা যাবে মেলা। ১০০০ থেকে ২০০০০০ টাকার মধ্যে নানা ধরনের ছবি রয়েছে। গ্যালারি খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।