Poila Baisakh 2025 Special

‘মায়ের হাতের মাছের ঝোলটা মিস্‌‌ করব’, মাতৃবিয়োগের পর প্রথম নববর্ষ উপলক্ষে লিখলেন অভিনেত্রী

সম্প্রতি মাতৃবিয়োগ ঘটেছে। মায়ের হাতের রান্না এবং নববর্ষের খাবার নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের জন্য কলম ধরলেন অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৩
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

এ বারের পয়লা বৈশাখ অনেকটাই শূন্যতায় ভরা। কারণ, ছোট থেকে এখনও পর্যন্ত বছরের এই বিশেষ দিনটা মা-বাবাকে ঘিরেই আবর্তিত হত। দু’সপ্তাহ হল মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাই নববর্ষ নিয়ে আলাদা করে কোনও উদ্‌যাপনের মানসিকতা নেই। প্রতি মুহূর্তে মাকে মিস্‌ করছি।

Advertisement

নববর্ষে এ বার মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হবে না। এটা ভেবেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে। ছোট থেকেই আমাদের বাড়িতে পয়লা বৈশাখের নিয়ম, মা নিজের হাতে সকলের জন্য রান্না করবেন। গত বছরেও হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে মা নববর্ষের আগে বাড়ি ফিরে এলেন। তার পরেও খুব কষ্ট করে এক দিন আমার জন্য মাছের ঝোল রান্না করে খাইয়েছিলেন। যত দূর মনে হচ্ছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। মা তখন আমার ফ্ল্যাটেই ছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখি ডাইনিং টেবলে আমার জন্য মাছের ঝোল ঢাকা দিয়ে রাখা। আমি নার্সকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কে রান্না করেছে। জানালেন, খুব কষ্ট করে রান্না ঘরে গিয়ে মা নাকি মাছের ঝোলটা রান্না করেছেন! কারণ তিনি খবর পেয়েছেন, মেয়ে ভাল করে খেতে পারছে না। সত্যিই, কথাগুলো শুনে চোখ ভিজে গিয়েছিল। এটাই হয়তো মায়েদের ভালবাসা। মায়ের হাতের ওই মাছের ঝোলটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়। তার পর মা আর দাঁড়াতে পারতেন না। রান্নাও করতে পারেননি। সেটাই ছিল আমার মায়ের হাতে আমার খাওয়া শেষ খাবার। এ বছর নববর্ষে ওই মাছের ঝোলটাকে খুব মিস্‌ করব।

মায়ের হাতের রান্নার জুড়ি মেলা ভার। তা ছাড়া, মা সকলকে রান্না করে খাওয়াতেও ভালবাসতেন। মনে পড়ছে, মায়ের হাতের পাঁঠার মাংসের ঝোলের কথা। মা একটা পোস্ত করতেন, সেটা আমাদের পরিবারের সকলেরই বিশেষ প্রিয়। আমার বিয়ের আগে নববর্ষের দিন মা শাক ভাজা থেকে শুরু করে বড়ি ভাজা, মুগের ডাল, দু’-তিন রকমের মাছ— একদম পঞ্চব্যঞ্জনের আয়োজন করতেন। এখন তো আমরা সবটা একার হাতে পেরে উঠি না। কিন্তু মা ছিলেন ব্যতিক্রম। সবটা করতেন নিজের হাতে।

আবার এ রকমও হয়েছে যে বাবা-মা এবং কাকাকে নিয়ে পয়লা বৈশাখের দিন আমি কোনও বাঙালি রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছি। মাকে বলতাম, ‘‘আজ তোমার ছুটি। চলো একসঙ্গে খেতে যাই।’’ নিজের মুখে না বললেও জানি, এই ধরনের উদ্যোগে মা কিন্তু খুশিই হতেন।

মায়ের সঙ্গে অভিনেত্রী।

মায়ের সঙ্গে অভিনেত্রী। —ফাইল চিত্র।

জানি না, এই কথাটা বললে অনেকেরই বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু গত একটা বছরে মা বাড়িতে রান্না করা বন্ধ করার পর থেকে খাবারের প্রতি টানটাই চলে গিয়েছে। কারণ, আমি পৃথিবীর বহু জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু বাড়ি ফিরে ওই মায়ের হাতের রান্নাটা মুখে দিয়ে স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতাম। আমার বিয়ের পর অনেকগুলো বছর কেটেছে। কিন্তু আমি অপেক্ষা করে থাকতাম, কবে ভবানীপুরের বাড়িতে যাব এবং মায়ের কাছে একটা মাছের ঝোল বা চিংড়ি পোস্তের আবদার করব। মা জানতেন, আমি কী কী খেতে পছন্দ করি। আর মা এটাও জানতেন, খিদে পেলে আমি রেগে যাই। তাই আমি বাড়ি যাচ্ছি জানলেই, মা আগাম কিছু না কিছু একটা রান্না করে রাখতেন। মা খুব ভাল একটা নুডল্‌স রান্না করতেন। বহু দিন হয়েছে, খিদের মুখে বাড়ি গিয়েছি। তার পর নুডল্‌‌স দেখেই মন ভাল হয়ে গিয়েছে।

আমার কাছে নববর্ষ মানে বাঙালি খাবার। অদ্ভুত বিষয়, আমার প্রচুর অবাঙালি বন্ধুবান্ধব রয়েছেন। পয়লা বৈশাখের দিন কিন্তু তাঁদেরও দেখেছি আলাদা করে বাঙালি খাবারটাই খেতে। ভাল লাগে। মায়ের শিক্ষায় বড় হয়েছি। তাঁর কাছেই আমার রান্না শেখা। তাই মায়ের রান্নাগুলো তার মতো না হলেও নিজের মতো করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই বিশেষ স্পর্শটা সেখানে অনুপস্থিত। মা তো রান্নার মধ্যে দিয়েই আমাদের মধ্যে ছিলেন। তবে মায়ের কথা ভেবেই এ বছর পরিবারের সকলের জন্য চেষ্টা করব মা যা রাঁধতেন, তেমন কোনও একটি পদ রেঁধে খাওয়াতে। কিন্তু জানি সেখানে মায়ের ওই স্পেশ্যাল এনার্জিটা থাকবে না। আসলে আমার মনে হয়, প্রত্যেক মা তাঁর সন্তানের জন্য শুভকামনা করেই রান্না করেন। সেই জন্যই হয়তো আমাদের প্রত্যেকেরই মায়ের হাতের রান্না সবচেয়ে প্রিয়।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)

Advertisement
আরও পড়ুন