ছবির প্রিমিয়ারের আগে একান্তে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত।
ফর্সা অশীতিপর বৃদ্ধার হাত ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কারও কাছে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপর্ণা’, কারও মনে ‘দয়াময়ী’। অপেক্ষারত এক অনুরাগী তো বলেই বসলেন, ‘‘উনি এখনও আমার ‘সপনো কি রানি’!’’
শর্মিলা ঠাকুর। তিনি এলে শহরে রব ওঠে। এখনও।
গত ১৪ বছরে বিভিন্ন সময়ে অজস্র বার কলকাতা এসেছেন। কিন্তু শুক্রবারের উপস্থিতির আলাদা তাৎপর্য। এত বছর পর শর্মিলা অভিনীত বাংলা ছবি মুক্তি পেল। তাই ‘পুরাতন’-কে ঘিরে সাজগোজ, হইচই।
নববর্ষের প্রাক্কালে বাংলা ছবির জমকালো প্রিমিয়ারে অভ্যাগতদের সাজগোজের থিম ছিল ‘বাঙালিয়ানা’। তার মধ্যে অনন্য শর্মিলার ঘিয়েরঙা শিফন শাড়ি। পরিচিত ভঙ্গিতে চুল এক পাশে পরিপাটি করে আঁচড়ানো, সামান্য গয়না— প্রিমিয়ার-সুলভ জাঁকজমক সাজগোজে নেই। উপস্থিতি বুঝিয়ে দেবে, তিনি আলাদা। তাঁর উপস্থিতি উদ্যাপন করতে সকলে সাজগোজ করেন। তবে তাঁর ‘স্টাইল’ চিরাচরিত। তাতে থাকে যেন শর্মিলার সহজ স্বাক্ষর।
ছিমছাম সাজে নজর কাড়লেন শর্মিলা। ছবি: সংগৃহীত।
‘শর্মিলা আন্টি’-র কথা শুনে
প্রবীণের আলোয় ঝলসে যায় না ঋতুপর্ণার সাজ। কর্মজীবনে বিশেষ জায়গা দখল করে থাকবে ‘পুরাতন’। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর পোশাক পরিকল্পনা কি? লাল ব্লাউজ় এবং সোনালি বুটি দেওয়া ঘিয়েরঙা সিল্কের শাড়ি। সঙ্গে মানানসই সোনার গয়নায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনন্যা। ঋতুপর্ণা জানালেন, তাঁর সাজে আছে শর্মিলার অবদান!
ঋতুপর্ণা শাড়ি নিয়ে শর্মিলার অনুরোধ ফেলতে পারেননি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রিমিয়ারের জন্য ঋতুপর্ণার একটি বিশেষ শাড়ি পরার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শর্মিলার অনুরোধেই তিনি আর পোশাক পরিবর্তন করেননি। ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘আমার মায়ের একটা লাল কাঞ্জিভরম শাড়ি পরার কথা ছিল। কিন্তু শর্মিলা আন্টি বললেন, এই শাড়িতে আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তাই শাড়ি বদলাতে নিষেধ করলেন। আমি ওঁর কথা রেখেছি।’’
গিন্নি যেমন বলেন
নিজের ছবির পাশাপাশি সারা বছরে অজস্র ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকেন ঋতুপর্ণা। কিন্তু এখানে অভিনেত্রীর পাশে স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী— এ রকম দৃশ্য কিছুটা অকল্পনীয় ঠেকলেও এটি সেই বিরলতম সন্ধ্যা। ঋতুপর্ণার নেপথ্যে অদৃশ্য ‘সাপোর্ট’ সঞ্জয়। প্রিমিয়ারেও সাক্ষাৎকার এবং ক্যামেরায় তাঁর অরুচি স্পষ্ট। কিন্তু তিনি বললেন, ‘‘শর্মিলাজি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। আমাকে আলাদা করে বলেছিলেন উপস্থিত থাকতে। তাই আসতেই হল।’’
স্বামী সঞ্জয়ের সাজের পরিকল্পনা নিজেই করেছেন ঋতুপর্ণা। ছবি: সংগৃহীত।
প্রিমিয়ারের সন্ধ্যায় সঞ্জয়ের কালো পাঞ্জাবিতে সবুজ- মেরুনের ফুল তোলা নকশা। সঙ্গে কনট্রাস্ট বজায় রাখতে সাদা নকশা তোলা কাশ্মীরি শাল। লাজুক হেসে বললেন, ‘‘এ সব বিষয়ে স্ত্রী যা বলে, সেটাই করি।’’ ঋতুপর্ণাও স্বামীকে সমর্থন করলেন। সঙ্গে জানালেন, শর্মিলা এবং তাঁর অনুরোধে সঞ্জয় এক দিনের জন্য সিঙ্গাপুর থেকে কলকাতায় এসেছেন।
বাবার ‘পুরাতন’ স্মৃতি
আনন্দঘন মুহূর্তগুলির মধ্যেও কোথাও লুকিয়ে থাকে ‘পুরাতন’-এর স্বাদ। শুক্র- সন্ধ্যায় পরিচালক সুমন ঘোষ সে কথাই যেন আরও এক বার মনে করিয়ে দিলেন। তাঁর পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ দেখে খুশি হয়ে বাবা কালো রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছিলেন। সম্প্রতি বাবাকে হারিয়েছেন সুমন। কিন্তু এ দিন লাল গোলাপের নকশা কাটা, বাবার দেওয়া সেই পাঞ্জাবি পরেই উপস্থিত তিনি। সঙ্গে মানানসই উত্তরীয়।
বাবার দেওয়া পাঞ্জাবিতেই হাসিমুখে পরিচালক সুমন ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
ভিড়ের মাঝে নায়ক
নায়কোচিত ইমেজ দূরে সরিয়েই উপস্থিত ছবির মুখ্য অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। কালো পাঞ্জাবির এক পাশে বুক থেকে সাদা কল্কা নেমে এসেছে। সঙ্গে কালো পাজামা এবং চামড়ার চটি। এলোমেলো চুলের লুককে পূর্ণতা দিয়েছে কালো ফ্রেমের চশমা।
ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তের সাজে বাঙালিয়ানার অন্য সংজ্ঞা। ছবি: সংগৃহীত।
আরও এক নায়ক
ছবির দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থিত অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। হাতা গোটানো সাদা কুর্তা ও ঘিয়েরঙা ট্রাউজ়ার্স। কুর্তার উপরে হলদে জওহর কোটে ‘পুরাতন’-এ নতুন হয়ে উঠেছিলেন পরমব্রত। স্ত্রী পিয়া চক্রবর্তী কি পোশাক পরিকল্পনা করে দিয়েছেন?
পরমব্রত হেসে বললেন, ‘‘না,না। আমাকে এখন কলকাতায়র বাইরে একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে। আবার ভোরে ফেরা। তার আগে এখানে তো আসতেই হত। নিজেই যেটা পছন্দ হয়েছে গায়ে চাপিয়ে নিয়েছি।’’ কিন্তু পরমব্রতের ঝটপট ফ্যাশন সন্ধ্যার সুর যে বেঁধে দিয়েছিল, তা স্পষ্ট।
ছবির প্রিমিয়ারে কী পরবেন তা নিজেই ঠিক করেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সাবেক বেশে
নানা সাজের ভিড়ে নজর কাড়লেন অভিনেত্রী তথা নৃত্যশিল্পী ইন্দ্রাণী দত্ত। ঋতুপর্ণার দীর্ঘ দিনের বান্ধবী। পরনে দক্ষিণী লাল ও সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি। সঙ্গে মানানসই সোনালি নকশাকাটা কালো ভেলভেটের ব্যাগ। খোলা চুল এবং সোনার গয়নায় ইন্দ্রাণীর ‘সিম্পল লুক’ আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বন্ধু ঋতুপর্ণার ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত থাকতে অন্য ধরনের শাড়িকেই বেছে নিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।
ছবিশিকারিদের আবদার মেটানোর ফাঁকেই এক অনুরাগীর মন্তব্য, ‘‘দিদি, খুব সুন্দর সেজেছেন।’’ মন্তব্য শুনে তত ক্ষণে পরিচিত হাসির ঝিলিক অভিনেত্রীর ঠোঁটের কোণে।