ঘরে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলকে আর্দ্র রাখে। ছবি: সংগৃহীত।
অজান্তেই চুলের ক্ষতি করে সূর্যালোক। দীর্ঘ ক্ষণ অতিবেগনি রশ্মির সংস্পর্শে থাকলে চুলের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে। ফলে চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর হয়ে যায়। কিন্তু সহজে চোখে পড়ে না বলে রোদ থেকে চুলকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন না অনেকেই। সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করার জন্য ত্বকের যেমন সানস্ক্রিনের প্রয়োজন, তেমনই চুলেরও সুরক্ষার প্রয়োজন। রান্নাঘরের সাধারণ উপকরণ দিয়েই হেয়ার মাস্ক তৈরি করে চুল রক্ষা করতে পারেন। তাতে খরচও বাঁচবে, উপরন্তু রাসায়নিক দেওয়া পণ্যগুলির হাত থেকে মুক্তি পাবে চুল।
ঘরে তৈরি হেয়ার মাস্ক চুলকে আর্দ্র রাখে, রোদ জনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, চুলের কোমলতা এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। সপ্তাহে এক বার করে মাখতে পারেন। কোঁকড়ানো বা স্ট্রেট অথবা রং করা চুল, সবের জন্যই এই হেয়ার মাস্কগুলি উপযুক্ত। এখানে পাঁচটি হেয়ার মাস্কের উল্লেখ করা হল, যা আপনি সহজে বানাতে পারেন ঘরেই।
কলা এবং মধুর মাস্ক
চুলকে আর্দ্র করে, ভঙ্গুরতা কমায়। কলায় প্রাকৃতিক তেল এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, যার ফলে চুল নরম হয়, চুলের কুঁকড়ে থাকার প্রবণতাও কমে। অন্য দিকে, মধুও আর্দ্রতা ধরে রাখায় পারদর্শী। রোদে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের চকচকে ভাব এবং মসৃণতা ফিরিয়ে আনে।
প্রণালী: একটি পাকা কলা এবং এক টেবিল চামচ মধু মিক্সার গ্রাইন্ডারে পিষে নিন। থকথকে না হওয়া পর্যন্ত মিক্সার ঘোরাতে থাকুন। ভেজা চুলে আধ ঘণ্টা মতো মেখে রেখে ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দই এবং মেথির মাস্ক
দইকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ়ার বললে অত্যুক্তি হয় না। উচ্চ প্রোটিন এবং প্রোবায়োটিক উপাদান সমৃদ্ধ বলে প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে দই। উল্টো দিকে, মেথির বীজে রয়েছে আয়রন, প্রোটিন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড থাকে, যা খুশকি প্রতিরোধ করে, চুল গজানোয় সাহায্য করে এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমাতে পারে।
কলা এবং মধুর হেয়ার মাস্কে দারুণ উপকার। ছবি: সংগৃহীত।
প্রণালী: ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারা রাত ভিজিয়ে রাখার পর মিক্সার গ্রাইন্ডারে ভাল করে পিষে নিন। তার সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে দিতে হবে। মাস্কটি মাথার ত্বকে এবং চুলে মেখে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তার পর ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যালোভেরা এবং নারকেল তেলের মাস্ক
অ্যালোভেরা এমন একটি উদ্ভিদ, যা এনজ়াইম, অ্যামিনো-অ্যাসিড এবং ভিটামিন এ, সি এবং ই-তে ভরপুর। ফলে চুলের ক্ষতি রোধ করা, ময়েশ্চারাইজ় করার ক্ষমতা রয়েছে অ্যালোভেরার। পাশাপাশি, নারকেল তেলের লরিক অ্যাসিড চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে প্রোটিনের ক্ষয় রোধ করে।
প্রণালী: ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে এই হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন। মাস্কটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। শেষে একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যাভোকাডো এবং ডিমের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত।
অ্যাভোকাডো এবং ডিমের মাস্ক
অ্যাভোকাডোয় রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, বায়োটিন, ভিটামিন বি এবং ই। চুলের পুষ্টি জোগানোর জন্য উপযুক্ত উপাদান এটি। অন্য দিকে ডিমে প্রোটিন থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
প্রণালী: ১টি পাকা অ্যাভোকাডো পিষে নিয়ে একখানি ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। চুলে লাগান। ২৫-৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গ্রিন টি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারের মাস্ক
গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ, যা মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চুলের গোড়াগুলিকে সক্রিয় করে। অন্য দিকে, অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মাথার ত্বকের পিএইচ-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রোদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চুলে ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে।
প্রণালী: ১ কাপ গ্রিন টি ঠান্ডা হতে দিন। ১ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার তার মধ্যে ঢেলে দিন। শ্যাম্পু করার পর এই তরলটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।