কোলেস্টেরল বাড়ছে বলে খাওয়া ছেড়েছেন। যা বাদ দিচ্ছেন তা আদৌ ক্ষতিকর কি? ছবি:ফ্রিপিক।
কোলেস্টেরলের মাত্রা খানিক বৃদ্ধি পেয়েছে কি পায়নি, খাদ্যতালিকা থেকে বিদায় করেছেন ডিম, দুধ, বাদাম-সহ অনেক কিছুই। খারাপ ভেবে যা বাদ দিচ্ছেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য আদৌ খারাপ তো! ঠিক জানেন?
হার্ট এবং কোলেস্টেরল নিয়ে ভয়, ভাবনা নতুন কিছু নয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লেই ডিম, বাদাম-সহ অনেক খাবারেই ইতি টানেন অনেকে। ধরেই নেওয়া হয়, কোলেস্টেরল বিষয়টি গোলমেলে এবং ভীষণ ক্ষতিকর। তার মাত্রার এ দিক-ও দিক হলেই বুঝি যে কোনও সময় হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।
তবে মুম্বইয়ের হৃদ্রোগের চিকিৎসক অভিজিৎ বর্সের কথায়, জানা দরকার, কোলেস্টেরল মানেই খারাপ নয়। বরং কোলেস্টেরলেরও শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভূমিকা থাকে।
কোলেস্টেরল হল মোমের মতো পদার্থ যা হরমোন উৎপাদনে, ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে। রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছোয়। শরীরে দু’ ধরনের কোলেস্টেরল মেলে। একটি হল লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) এবং হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল)।
লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন: এলডিএলের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা রক্তবাহী নালিতে জমে পুরু আস্তরণের সৃষ্টি করে। এতে হার্টের অসুখের ঝুঁকি বা়ড়ে। এই জন্য একে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়।
হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন: এটি আবার শরীরের জন্য ভাল। রক্ত থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকের কথায়, কোলেস্টরল কমানো নয় বরং লক্ষ্য হওয়া উচিত যাতে ভাল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রার সামঞ্জস্য বজায় থাকে।
ধারণা এবং ভুল
দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত ধারণা হল ডিম, চিংড়ি, পাঁঠার মাংস কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রার হেরফের হলে প্রথমেই এগুলি বাদ দেওয়া দরকার। অনেকেই ফ্যাট জাতীয় খাবারও বাদ দিয়ে দেন।
ডিম: ডিম নিয়ে নানা গবেষণায় ধারণা বদলাচ্ছে। লুটেইন এবং জেক্সানাথিন নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে ডিমে। হৃদ্রোগের ঝুঁকি এ়ড়াতে এই ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সত্যিই কার্যকর। ডিমে পাওয়া যায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এতে থাকা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। বয়সজনিত চোখের সমস্যা থেকে দূরে থাকতেও ডিমে থাকা এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের বিকল্প নেই। লুচি-পরোটার মতো তৈলাক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারের থেকে পরিমিত ডিম খাওয়া অনেক স্বাস্থ্যকর, বলেন চিকিৎসকেরা। তবে কারও শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কতটা বেশি, বয়স কেমন, রোগীর শরীর বুঝে ডিম হোক বা অন্য খাবার, কতটা খাওয়া যাবে, তা বলতে পারবেন চিকিৎসক।
কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোট: কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোট তালিকাতেই রাখলেই যে কোলেস্টেরল বাড়বে, তা কিন্তু নয়। এতে রয়েছে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাটও হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে উপযোগী। ফলে তেলযুক্ত মাছ, বড় মাছ— সবই রাখা যাবে তালিকায়, তবে তার পরিমাণ হতে হবে পরিমিত।
কোন খাবারে সাবধানতা জরুরি?
যে সব খাবারে ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে বা স্যাচুরেটে়ড ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, সেই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা দরকার। প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। পিৎজ়া, বার্গার জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। রেড মিট, তেল, মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট মেলে। দৈনন্দিন ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকাও জরুরি বলেন পুষ্টিবিদেরা। তবে তা হতে হবে পরিমিত। কারণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
চিকিৎসক অভিজিৎ বলছেন, ‘‘কোনটি কতটা খাওয়া যাবে তা, ব্যক্তিবিশেষের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করবে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবার এবং খাবারে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিনের উপযুক্ত ভারসাম্য প্রয়োজন। একই সঙ্গে দরকার শরীরচর্চা।’’ পাশাপাশি, নির্দিষ্ট সময় অন্তর শারীরিক পরীক্ষার উপরেও জোর দিচ্ছেন তিনি।