আনন্দ পিরামল এবং ইশা অম্বানী। গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
রূপকথার রাজকন্যার সাতমহলা প্রাসাদে সোনার খাঁচায় রুপোর দাঁড়ে বসে মুক্তো বসানো বাটিতে দানাপানি খায় পোষা টিয়া। রাজকন্যার থাকার জায়গাটি তবে কেমন হতে পারে, তা অনুমেয়। বাস্তবের ‘রাজকন্যা’ ভারতীয় ধনকুবেরের কন্যা ইশা অম্বানীর বাড়িটি সেই অনুমানের কাছাকাছি যেতে পারে। কারণ তাঁর বাড়িটি দেখলে মনে হবে, তাতে একাধিক প্রকাণ্ড হিরে বসানো রয়েছে।
মুম্বইয়ের ওরলিতে আরব সাগর-মুখী অট্টালিকাটির নাম ‘গুলিটা’। তবে তাকে ঠিকঠাক ব্যাখ্যা করতে হলে ‘প্রাসাদ’ বলতে হয়। ৫০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাঁচতলা সেই প্রাসাদের মাটির নীচেও রয়েছে তিনটি তল। বাড়িটি বিয়েতে উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন অম্বানী কন্যা ইশা এবং তাঁর স্বামী আনন্দ পিরামল।
বিয়েতে পাওয়া বিশ্বের সেরা দামি উপহারগুলির তালিকায় নিঃসন্দেহে স্থান পাবে ‘গুলিটা’। ছবি: সংগৃহীত।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পিরামল গোষ্ঠীর উত্তরাধিকারী আনন্দকে বিয়ে করেন ইশা। আনন্দের বাবা-মা অজয় এবং স্বাতী পিরামল ছেলে এবং বৌমাকে উপহার দেন ওই প্রাসাদ। যা তাঁরা নিজেরা থাকবেন বলে ছ’বছর আগে কিনেছিলেন হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের কাছ থেকে।
সেই সময় ‘গুলিটা’র দাম ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। পরবর্তী কালে বাড়িটিকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেন পিরামলেরা। তাতে ওই বাড়ির দাম আরও বাড়ে। ইশা যে সময় ওই বাড়ি উপহার হিসাবে পান, তখন তার দাম ছিল ৮১৮ কোটি টাকা। বিয়েতে পাওয়া বিশ্বের সেরা দামি উপহারগুলির তালিকায় নিঃসন্দেহে স্থান পাবে ‘গুলিটা’।
বাড়ির পাঁচতলার প্রথম তিনতলার মাঝামাঝি অংশে রয়েছে খেজুর গাছের গুঁড়ির আদলে একটি কাঠামো। ছবি: সংগৃহীত।
গুলিটা তৈরি করেছে লন্ডনের স্থাপত্য সংস্থা একার্সলি ও’ক্যালাগান। ‘হীরকখচিত’ ওই বাড়িতে যাঁরা প্রবেশাধিকার পেয়েছেন, তাঁরা বলেন, বিলাসিতা অন্য মাত্রা পেয়েছে ‘গুলিটা’য়। বাড়ির পাঁচতলার প্রথম তিনতলার মাঝামাঝি অংশে রয়েছে খেজুর গাছের গুঁড়ির আদলে একটি কাঠামো, যা দেখতে অনেকটা বিশাল মাপের হিরের মতো। উপরের দু’টি তলে রয়েছে ওই ধরনেরই আরও দু’টি কাঠামো, এগুলি আলো পড়লেই ঝিকমিকিয়ে ওঠে। বাড়ির সামনের দিকের পুরো দেওয়ালটাই ঝকঝকে কাচের। এটি ‘হিরের গাছের’ সঙ্গে মানানসই।
গ্রাউন্ডফ্লোরে রয়েছে সাজানো-গোছানো এন্ট্রান্স লবি। তার নীচের তিনটি তলের একটিতে রয়েছে লন। একটিতে খোলা জলাধার এবং মাল্টিপারপাস রুম। একেবারে নীচের তলটি গাড়ির পার্কিংয়ের জন্য।
মুম্বইয়ে এই বাড়িতেই দুই সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে সংসার ইশার। ছবি: সংগৃহীত।
এ ছাড়া গুলিটায় রয়েছে, হিরের আদলে তৈরি বিলাসবহুল দু’টি মাস্টার বেডরুম। রয়েছে গ্রন্থাগার এবং পড়ার জায়গা, ডাইনিং হল, থিয়েটার, সুইমিং পুল, গেম রুম, ফিটনেস রুম, এমনকি একটি মন্দিরও।
মুম্বইয়ে এই বাড়িতেই দুই সন্তান এবং স্বামীকে নিয়ে সংসার ইশার। তিনি বিয়ের আগে থাকতেন অম্বানীদের মুম্বইয়ের ২৭তলা বাড়ি ‘অ্যান্টিলিয়া’য়। তবে ‘গুলিটা’কে যে তিনি অ্যান্টিলিয়ার থেকেও বেশি পছন্দ করেন, তা এক বার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন নীতা অম্বানী। ওই সাক্ষাৎকারে মা নীতার সঙ্গে ছিলেন ইশাও। ‘গুলিটা’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘‘গুলিটা’তে গেলে আমার মনে হয়, আমি আমার বাড়িতে এসেছি।’’ শুনে নীতা কিছুটা অভিমানের সুরেই বলেছিলেন, ‘‘মেয়ে যখন ‘অ্যান্টিলিয়া’ থেকে ‘গুলিটা’তে যাওয়ার সময় বলে ‘বাড়ি ফিরছি’, তখন একটু খারাপই লাগে।’’