BPSC Aspirant Protest

প্রশান্ত কিশোর ‘আমরণ’ অনশনে কেন? বিহারে কী নিয়ে এত অসন্তোষ? সরকারের অবস্থানই বা কী

গত ২ জানুয়ারি থেকে পটনার গান্ধী ময়দানে ‘আমরণ’ অনশন শুরু করেন প্রশান্ত কিশোর। সোমবার ছিল তার পঞ্চম দিন। ভোরের আলো ফোটার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তিনি জামিন পেয়েছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৯
পটনার গান্ধী ময়দান থেকে ভোর পৌনে ৪টেয় অনশনরত প্রশান্ত কিশোরকে (ডান দিকে) তুলে নিয়ে যায় বিহার পুলিশ।

পটনার গান্ধী ময়দান থেকে ভোর পৌনে ৪টেয় অনশনরত প্রশান্ত কিশোরকে (ডান দিকে) তুলে নিয়ে যায় বিহার পুলিশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বিহারের পটনায় গান্ধী ময়দানে ‘আমরণ’ অনশনে বসেছিলেন প্রাক্তন ভোটকুশলী তথা জন সুরাজ দলের নেতা প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। তাঁকে সোমবার ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখান থেকে তুলে যায় পুলিশ। পিকে-কে গ্রেফতার হয়। শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পটনা এমস হাসপাতালেও। বেলা ১২টার পর পটনা সিভিল কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন প্রশান্ত।

Advertisement

বিহারের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি) পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অশান্তি চলছে পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্যটিতে। চাকরিপ্রার্থীদের একটা বড় অংশ পথে নেমেছেন। তাঁদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছেন পিকে। যদিও প্রতিবাদী চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ এই আন্দোলনে রাজনীতির প্রবেশ পছন্দ করছেন না বলে জানিয়েছেন। এর আগে ৭০তম বিপিএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গান্ধী ময়দানে জমায়েত করেছিলেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। পিকে-ও সেখানে ছিলেন। রাতে সেই জমায়েত মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পিকের বিরুদ্ধে এফআইআরও হয়। তার পর তিনি অনশনে বসেন।

অভিযোগ কী?

৭০তম বিপিএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। ফলে ওই পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি উঠেছে। যদিও কমিশন সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে প্রথম থেকেই। তাদের দাবি, আদৌ কোনও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। সব সেন্টারে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

পিকে-র ভূমিকা

বিপিএসসিতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে প্রথম দিন থেকে সরব পিকে। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই বিহারের চাকরির পরীক্ষাগুলিতে কারচুপি চলছে। কিন্তু সরকার নিরুত্তাপ। রাজ্যের অনেক শিক্ষাবিদ এবং বিরোধী রাজনীতিকেরাও চাকরিপ্রার্থীদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। পিকে-র বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থীদের সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশের অনুমতি না-থাকা সত্ত্বেও গান্ধী ময়দানে জমায়েত করেছিলেন পিকে। বিক্ষোভে উস্কানিও দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ মামলা রুজু করলেও পিকে চুপ করেননি। বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করেন।

মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ

আন্দোলন পর্বের প্রথম থেকেই পিকে-র নিশানায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। তাঁর কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বার বার দিল্লি যেতে পারেন, এক বার নিজের রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। বিপিএসসি ‘দুর্নীতি’ নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন পিকে।

ভোররাতে গ্রেফতার

২ জানুয়ারি থেকে গান্ধী ময়দানে অনশন শুরু করেছেন পিকে। তিনি জানিয়েছেন, বিহার সরকার তাঁদের দাবি না-মানলে ‘আমরণ’ অনশন চালিয়ে যাবেন। সোমবার ছিল সেই অনশনের পঞ্চম দিন। অভিযোগ, ভোরের আলো ফোটার আগে ৩টে ৪৫ মিনিট নাগাদ অনশনস্থলে হানা দেয় পুলিশ। ঘুম থেকে টেনে তোলা হয় পিকে-সহ বিক্ষোভকারীদের। পিকে-কে টেনেহিঁচড়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলে পুলিশ। তাঁর সঙ্গে তাঁর কিছু অনুগামীকেও গ্রেফতার করা হয়। পিকে-র শ্বাসকষ্টজনিত কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এমসে। পিকে-র অনুগামীদের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে না-চাইলে তাঁকে চড় মারেন এক পুলিশকর্মী। ধস্তাধস্তির একাধিক ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। (তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)

সরকারের অবস্থান

বিপিএসসি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে প্রথম থেকেই কড়া অবস্থানে বিহার সরকার। কমিশন অনিয়ম অস্বীকার করেছে। প্রতিবাদী পরীক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ থেকে শুরু করে ধরপাকড় চলছে। সোমবার পটনার জেলাশাসক চন্দ্রশেখর সিংহ বলেন, ‘‘গান্ধী ময়দান থানা প্রশান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় একটি এফআইআর দায়ের করেছে। গান্ধী ময়দানে বেআইনি ভাবে তিনি প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। হাই কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, গর্দানি বাগ ছাড়া কোথাও ধর্নায় বসা যাবে না। অনেক বার অনুরোধ করার পরেও উনি পুলিশের কথা শোনেননি। তাই ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন