শুক্রবার পটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
সাগরদিঘির তিক্ততা পটনা বৈঠকের টেবিলে কিছুটা লঘু হল— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের যে ‘অ্যালার্জি’ দেখতে জাতীয় রাজনৈতিক শিবির অভ্যস্ত, সেটিও আপাতত কমল বলে ঘরোয়া ভাবে দাবি বঙ্গের শাসক দলের নেতৃত্বের।
সূত্রের খবর, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনে আজকের বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তালসঙ্গত ছিল মধুর স্বরে বাঁধা। শুধু তাই-ই নয়, তাঁরা একে অন্যের ভূমিকার প্রশংসাও করেছেন বলে খবর। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এর অর্থ এমন নয়, যে শনিবার থেকেই পঞ্চায়েত ভোটমুখী বাংলায় ‘হাত’ ও ‘জোড়া ফুল’-এর সংঘাত, চাপান-উতোর বন্ধ হয়ে যাবে। তা না হলেও, জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে রাহুল-মমতার বোঝাপড়া ভাল হওয়াকে ২০২৪-এর আগে বিরোধী জোটের পক্ষে মঙ্গলের চিহ্ন বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আজ বৈঠকের শুরুতেই নীতীশ প্রস্তাব দেন, কংগ্রেস যে হেতু বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল, তাই আলোচনার সূচনা করুক তারাই। কিন্তু কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুলেরা বলেন, তাঁরা যে হেতু সবচেয়ে বড় দল, তাই সকলের শেষেই বলতে চান। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দলের মতামত শুনে নেওয়ার অবকাশ থাকবে। এই মনোভাবকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলেই বৈঠকের শেষে ব্যাখ্যা করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এর আগেও সংসদীয় সমন্বয়ের প্রশ্নে তৃণমূলের তরফে বার বার বলা হয়েছিল, কংগ্রেস যদি ‘উদার মনোভাব’ দেখায়, তা হলে জোট গঠনের কাজটা তৃণমূলের পক্ষে অনেকটাই সহজ হবে। অর্থাৎ, এক কথায় ‘অ্যালার্জি’ কমবে।
জাতীয় রাজনীতিতে আম আদমি পার্টি(আপ)-র প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল বরাবরই মমতার খুবই ঘনিষ্ঠ নেতা বলে পরিচিত। দিল্লিতে আমলা-নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কেন্দ্রের অধ্যাদেশ নিয়ে কেজরী এবং কংগ্রেসের বিবাদে মমতা আজ কার্যত ‘রেফারি’-র ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার যথেষ্ট প্রশংসাও করেছেন রাহুল। কেজরী যখন সাংবাদিক বৈঠকে অধ্যাদেশকে সমর্থন করতে হবে বলে কংগ্রেসের উপর চাপ দেন এবং পরিস্থিতি কিছুটা বেসুরো হয়ে ওঠে, সেই সময় মমতাকে মাইক ধরতে দেখা যায়। সূত্রের খবর, মমতা বেশ কয়েক বার মধ্যস্থতায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। কেজরী এবং রাহুলকে তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ, তাঁরা দু’জন কয়েক দিনের মধ্যে দিল্লিতে বসে চা-বিস্কুট খেয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করে নিন। তাঁর মতে, সব সমস্যার সমাধান চায়ের কাপে হয়ে যায়। অন্য নেতাদের সঙ্গে সমস্বরে মমতাও বলেন, সংবিধানসম্মত নয়, এমন কোনও সিদ্ধান্তকে কোনও বিরোধী নেতাই সমর্থন করবেন না। সে বিষয়ে আপ নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। কিন্তু আজই কংগ্রেসকে অধ্যাদেশের প্রশ্নে আপকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করতে হবে, এ ভাবে তাদের কানে বন্দুক ঠেকানো ঠিক নয়।
বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠকটি যাতে দিল্লিতে না হয়ে পটনায় হয়, সেই প্রস্তাব মমতাই দিয়েছিলেন। কারণ, দিল্লিতে হলে সেখানে নেতৃত্বের সিলমোহর দেখা যাবে কংগ্রেসের। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী আরও মনে করেন, পরবর্তী বৈঠকটি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে হওয়া কাম্য। কারণ প্রতিটি দলের ধার ও ভারকে সম্মান করা উচিত, তাতে জোটধর্ম বজায় থাকবে। তাই পরবর্তী বৈঠক হবে শিমলায়। এ ছাড়া কংগ্রেস যেখানে শক্তিশালী, সেখানে বাকি দলগুলিকে তাদের পাশে থাকার ডাকও আজ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে অতি দৃশ্যমান ‘অ্যালার্জি’ কিছুটা কমার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল চলতি মাসেই। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ওড়িশার রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে চাইলে মমতার দলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তাঁর টুইট-কে সমর্থন করেন তৃণমূলের সাকেত গোখেল। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমন্বয় নিছক কাকতালীয় বিষয় নয়।