উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। —ফাইল চিত্র।
প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ ঘিরে বিতর্কের মাঝে ফের মুখ খুললেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়। তাঁর দাবি, সাংবিধানিক বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন এবং এ ক্ষেত্রে সংসদের উপরে আর কোনও কর্তৃপক্ষ নেই। মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় এমনটাই জানান তিনি। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, “সাংবিধানিক বিষয়বস্তু কী হবে, সে বিষয়টি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘আসল কর্তা’ হলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সংবিধান অনুসারে এ ক্ষেত্রে সংসদের উপরে কারও কথা বলা হয়নি। সংসদই এ ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানে।”
তাঁর মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসা জনপ্রতিনিধিরা ভীষণ ভাবে দায়বদ্ধ। উদাহরণ হিসাবে অতীতে জরুরি অবস্থা জারির প্রসঙ্গও টেনে আনেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর নাম না-করে তাঁর বক্তব্য, ওই জরুরি অবস্থার জন্যও এক প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করা হয়েছিল। দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন মৌলিক অধিকার নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সময়েও শীর্ষ আদালত যে দেশের ন’টি হাই কোর্টের রায়কে খারিজ করে মৌলিক অধিকার স্থগিতের পক্ষে রায় দিয়েছিল, তা স্মরণ করিয়ে দেন উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়। বস্তুত, এই বিতর্কের আবহে সোমবারই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই মন্তব্যের এক দিন পরেই উপরাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় অশান্তির অভিযোগ তুলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়েছিল। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। আগামী মাসেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। সোমবার মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি গবই মন্তব্য করেন যে, এমনিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে ‘প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার’ অভিযোগ উঠেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে নির্দেশ দেবেন না। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনারা কি চান যে এই আবেদন কার্যকর করার জন্য আমরা রাষ্ট্রপতিকে লিখিত নির্দেশ দিই? এমনিতেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ার অভিযোগ উঠছে। দয়া করুন!’’
সম্প্রতি তামিলনাড়ুর কিছু বিল আটকে থাকা সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যপালকে সাংবিধানিক বিধি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, কোনও রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজ্যপাল আটকে রাখতে পারেন না। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকেও সময় বেঁধে দিয়ে জানায়, যে কোনও বিল নিয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে। শীর্ষ আদালতের ওই পর্যবেক্ষণের পর থেকে বিজেপির একাংশের নেতারা মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। যদিও বিজেপির দাবি, সেগুলি নেতাদের ‘ব্যক্তিগত মতামত’। তবে উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন সেই সময়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা এখনও সেই পরিস্থিতিতে আসিনি, যেখানে আপনি রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দিতে পারেন।’’