Jammu and Kashmir Terror Attack

ভয়কে উপেক্ষা করেই কাশ্মীরে যাচ্ছেন অনেক পর্যটক, কেউ কেউ পহেলগাঁওয়েও! আওয়াজ উঠছে: সন্ত্রাসকে জিততে দেব না

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ। কিন্তু দেখা গেল, কাশ্মীর একেবারেই পর্যটকশূন্য হয়ে যায়নি। ভয়কে উপেক্ষা করেই ভূস্বর্গে যাচ্ছেন অনেকে। যাচ্ছেন পহেলগাঁওয়েও।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০৫
শিকারায় চেপে ডাল লেকে ঘুরছেন পর্যটকেরা।

শিকারায় চেপে ডাল লেকে ঘুরছেন পর্যটকেরা। ছবি: পিটিআই।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ। উপত্যকার বাসিন্দাদের একাংশের মত, পর্যটকদের উপর হামলা আসলে তাঁদের পর্যটন শিল্পকেই ধ্বংসের চেষ্টা। কোমর ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনীতির। হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে এ কথাই বার বার বলতে শোনা গিয়েছে কাশ্মীরবাসীদের মুখে। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার অভিঘাতে যে ভাবে উপত্যকা ছাড়ার ঢল দেখা গিয়েছিল ভূস্বর্গে, তাতে সেই আশঙ্কাই আরও প্রকট হয়েছিল। কিন্তু সার্বিক চিত্রটা আদতে তা নয়। কাশ্মীর একেবারেই পর্যটকশূন্য হয়ে যায়নি। ভয়কে উপেক্ষা করেই ভূস্বর্গে যাচ্ছেন অনেকে। যাচ্ছেন পহেলগাঁওয়েও। কারও কারও মুখে এ-ও শোনা যাচ্ছে— সন্ত্রাসবাদকে জিততে দেওয়া যাবে না।

Advertisement

গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন পর্যটক। এক জন কাশ্মীরেরই বাসিন্দা, পেশায় সহিস। ওই ঘটনার পর পর্যটকদের অনেকেই কাশ্মীর ছেড়ে জম্মুতে চলে গিয়েছিলেন। যাঁদের জম্মু থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তাঁদের অনেকে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দ্রুত ফেরার চেষ্টা করেছেন। এর জেরে এক ধাক্কায় পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে উপত্যকায়। যেখানে প্রত্যেক দিন পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যটকের আনাগোনা, সেখানে এখন পর্যটকের সংখ্যা ৫০-১০০ জন। জম্মু-কাশ্মীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবর চৌধরি বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর অন্তত ১৩ লাখ বুকিং বাতিল হয়েছে।’’

কিন্তু যে সব পর্যটক এখন কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, ভূস্বর্গের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। কলকাতার বাসিন্দা জয়দীপ ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘আমরা তো গত শুক্রবার এলাম কাশ্মীরে। এখানে সব কিছুই স্বাভাবিক কিন্তু। এটা ঠিকই যে, বাজার, দোকানপাট সে ভাবে খোলা থাকছে না। কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনী এবং স্থানীয়েরা খুবই সাহায্য করছেন। বৈসরন যাওয়া যাচ্ছে না, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় দিব্যি ঘোরা যাচ্ছে।’’

রবিবারই কাশ্মীর থেকে কলকাতায় ফিরেছেন টালার বাসিন্দা সৌমি ঘোষ। ঘটনার দিন তিনি পহেলগাঁওয়েই ছিলেন। পহেলগাঁওয়ের আশপাশে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর হোটেলে ঢুকে জঙ্গি হামলার খবর জানতে পারেন তাঁরা। সৌমি জানান, গত ২২ এপ্রিল ওই ঘটনার পর ২৩ তারিখেও তাঁরা বেরিয়েছিলেন। কাটরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। হোটেলে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁদের। পর দিন থেকে আর কোনও সমস্যা হয়নি। তবে পর্যটকের সংখ্যা কমই ছিল বলে জানান সৌমি। তাঁর যুক্তি, অন্য সময় হলে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যে ভিড় হত, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সেই ভিড় ছিল না।

সৌমি বলেন, ‘‘আমাদের একটাই বক্তব্য, সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই জিততে দেওয়া যাবে না। তাই আমরা ফিরে আসিনি। পরিকল্পনা মতোই ঘুরেছি। আমরা যে হোটেলে ছিলাম, সেই হোটেলের লোকেরা আমাদের ক্রমাগত আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। বার বার বলেছেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব আমাদের। আপনারা যাবেন না।’ তখন কাশ্মীরে আমাদের থেকে যাওয়ার পিছনে এটাও বড় কারণ। আমাদের মনে হয়, এই আবহটা কাটলে আবার পর্যটকেরা কাশ্মীরে যাবেন। কাশ্মীর আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’

কাশ্মীরিরা বরাবরই বলে এসেছেন, পর্যটনই তাঁদের আয়ের মূল পথ। চলতি বছরের শুরু থেকে অন্তত লক্ষাধিক পর্যটক কাশ্মীরে আসায় কিছুটা আশার আলো দেখছিলেন নানা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। করোনা অতিমারির সময়ে লকডাউনের জেরে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির পরে এ বছরই যেন সবচেয়ে বেশি পর্যটক হচ্ছিল বলে মনেও করছিলেন তাঁরা। তবে পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে সে আশা ক্রমশ ক্ষীণ হতে বসেছিল। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ভূস্বর্গ যদি পর্যটকশূন্য হয়ে যায়, তা হলে স্থানীয়দের রুজিরুটির কী হবে! হামলার ঘটনার প্রতিবাদে কাশ্মীরে সর্বাত্মক বন্‌ধ পালন করা হয়েছে। গত ৩৫ বছরে যা এই প্রথম। নানা এলাকায় মসজিদের স্পিকারে বার বার ঘোষণা করা হয়েছে, স্থানীয়েরা দোকান বন্ধ রেখে যেন প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন। হয়েছেও তা-ই। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উদ্দেশে তাঁদের সকলেরই আর্জি, ‘‘আপনারা কাশ্মীর ছেড়ে যাবেন না। আপনার দয়া করে এখানে আসুন।’’

পর্যটকেরা যাচ্ছেনও। খুব বেশি সংখ্যায় না হলেও কাশ্মীর ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বিহারের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় পাণ্ডে জানান, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর প্রথমে কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়া বাতিল করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরে সেখানে সপরিবারই যান। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘যখন শুনলাম, পহেলগাঁওয়ে যাওয়ায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, তখন চলে এলাম। শনিবার সকালেই এসেছি। এখন ঘুরে বেড়াচ্ছি। সব ঠিকঠাকই আছে। কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’

কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়েছেন সার্বিয়ার বাসিন্দা ইভানা। তিনি বলছেন, ‘‘সব কিছু শোনার পরেও আমরা এসেছি। জায়গাটা যে কতটা সুন্দর, তা এখানে না এলে জানতে পারতাম না। ভাগ্যিস কিছু না ভেবেই চলে এলাম। এখানে পর্যটকেরা আসা বন্ধ করে দিলে সন্ত্রাসবাদীদের জয় হবে। তা হতে দেওয়া যায় না। কাশ্মীরকে এ ভাবে শেষ করে দেওয়া যাবে না।’’

Advertisement
আরও পড়ুন