মধ্যপ্রদেশের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। ছবি: সংগৃহীত।
নির্বাচিত বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে মহাগুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে মধ্য প্রদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নয়া মোচড়ের ইঙ্গিত। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের কার্যালয়ের তরফে পোস্ট করা একটি সমাজমাধ্যম পোস্ট যাবতীয় জল্পনার কেন্দ্রে। শনিবার মামাজির অফিস আচমকাই তাঁর হাতজোড় করা একটি ছবি পোস্ট করে। সেখানে কেবল লেখা, সবাইকে রাম-রাম!
এ বার এ নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনার তুফান। ভারতীয় সংস্কৃতিতে রাম-রাম শব্দটি দু’ভাবে ব্যবহার হয়। প্রথমত, কারও সঙ্গে দিনে প্রথম বার দেখা হলে রাম-রাম সম্বোধন করেন একে অপরকে। আবার আলাপ শেষে বিদায়ের মুহূর্তে একে অপরকে রাম-রাম সম্বোধন করাও প্রচলিত রীতি। মামাজি শিবরাজ এই পোস্টের মধ্যে দিয়ে রাম-রামের কোন অর্থ বোঝাতে চেয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। সোমবার বিজেপির তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক নির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন। সেখানেই বিধায়করা নিজেদের নেতাকে বেছে নেবেন। তার আগে শিবরাজের এই পোস্টের তাৎপর্য তাই অত্যন্ত বেশি। শিবরাজ কি নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর দৌড় থেকে স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিচ্ছেন? তাই কি তিনি রাম-রাম বলে বিদায় জানিয়ে দিলেন? স্বভাবতই জল্পনা আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে।
মামাজি জল্পনায় ভরা পোস্ট দিলেও মধ্যপ্রদেশ বিজেপি অবশ্য এখন সেই বিতর্কে ঢুকতে নারাজ। রাজ্য সভাপতি বিষ্ণুদত্ত শর্মা সেই একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছেন। তাঁর দাবি, সোমবারের বৈঠকে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদনক্রমে বিধায়করা তাঁদের নেতা বেছে নেবেন। তিনি বলছেন, ‘‘সোমবার সকালে তিন জন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ভোপালের মাটি ছোঁবেন। বিকেল ৪টেয় বিধায়করা মিলিত হয়ে তাঁদের নেতাকে বেছে নেবেন। সমস্ত বিধায়কের কাছেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে গিয়েছে।’’
বিষ্ণুদত্তকেও শিবরাজের রাম-রাম পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আরে, এটা তো রামেরই দেশ! ২২ জানুয়ারি ভগবান রামকে অযোধ্যার রামমন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা সকালে কারও সঙ্গে দেখা হলে তো বলি, ‘রাম-রাম’। এটাই আমাদের সংস্কৃতি যে, রাম নামের মধ্যে দিয়েই আমরা দিন শুরু করি।’’
মধ্যপ্রদেশে এক বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে বিজেপি। মামাজি না মোদীজি— রাজ্য নেতৃত্ব এটাই বুঝে উঠতে পারছে না যে, উপর্যুপরি দ্বিতীয় বার রাজ্য জয়ের পিছনে কাজ করেছে কোন জাদু? ফলে শিবরাজকে সামনে রেখেই পথ চলা হবে না কি বেছে নেওয়া হবে নতুন কাউকে, তা নিয়েই এখন গেরুয়া শিবিরে ধন্দ। এত দিন শিবরাজ পুরোমাত্রায় লড়াইয়ে ছিলেন। কিন্তু শনিবার তাঁর ‘রাম-রাম’ পোস্ট নতুন করে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিল। তা হলে কি মামাজি লড়াই ছেড়ে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন?