বক্তা রাহুল। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
দাড়ি থাকুক বা না থাকুক, তিনি স্বচ্ছন্দ!
তিনি, রাহুল গান্ধী, আজ দিল্লির এক অনুষ্ঠানে চটজলদি প্রশ্নবাণের মুখে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই উত্তর দিলেন। ‘এটা নাকি অন্যটা’— এই ছিল প্রশ্নের কাঠামো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রধান নেতা যখন দশকের পর দশক সাংবাদিকদের মুখোমুখিই হন না, তখন কোনও প্রশ্নই এড়িয়ে যেতে দেখা যায়নি রাহুলকে। উত্তর দিয়েছেন স্বচ্ছন্দে, সাবলীল ভাবে। আবার সব প্রশ্নই ছিল রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরের ব্যক্তিগত বিষয়ে।
নেটফ্লিক্স চালিয়ে মজে থাকা নাকি জিম-এ গিয়ে ঘাম ঝরানো? রাহুলের ঝটিতি জবাব, “জিমে গিয়ে শরীরচর্চা।” তাঁর হৃদয়ের সব চেয়ে কাছের মানুষ? এই প্রশ্নের জবাব দিতে কিছুটা সময় ভাবলেন রাহুল, সম্প্রতি লালুপ্রসাদকেও যাঁর বিয়ের জন্য দৃশ্যত ঝুলোঝুলি করতে দেখেছেন মানুষ! রাহুল বলেন, “অনেকেই তো ভালবাসার জন। মা, বোন, আমার পোষ্য, বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব।” কেমনটা তাঁর পছন্দ? সৌন্দর্যের সঙ্গে মস্তিষ্কের মিশেল, নাকি শুধু সৌন্দর্যেরই উপাসক তিনি? প্রাক্তন কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের সপ্রতিভ জবাব, ‘‘মস্তিষ্কের সঙ্গে সৌন্দর্য!’’
গত কয়েক বছর ধরেই রাহুল গান্ধীর দাড়ি রাখা এবং না রাখা নিয়ে রাজনৈতিক বৃত্তে বহু আলোচনা। দেখা গিয়েছে যখন তিনি কোনও রাজ্যে বা ভোটের ময়দানে থাকছেন, দাড়ির দৈর্ঘ্য বাড়ছে। আবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক বা বিদেশ সফরে সেই দাড়ি উধাও। চকচকে গাল। আজ উত্তরের অছিলায়, বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেয়েছেন রাহুল। বলেছেন, “আসলে কংগ্রেস (কর্মীরা) আমার দাড়ি রাখা না রাখা নিয়ে খুব ভাবে! আমরা কিছু যায় আসে না দাড়ি আছে কি নেই। আমাকে যে কোনও জামা, খাবার দিয়ে দিন, চলবে। এ সবে আমার বিরাট আসক্তি নেই।” তবে অন্য প্রশ্নের উত্তরে রাহুল জানিয়েছেন, কংগ্রেসের ট্রেড মার্ক কুর্তা পাজামার পরিবর্তে টি শার্ট-ই তাঁর পছন্দের পোশাক।
ফুটবলকে তিনি ক্রিকেটের চেয়ে বেশি ভালবাসেন বলে আজ জানিয়েছেন রাহুল। এমনকি, এ-ও বলেন, “জানি এটা বলা হয়তো ঠিক হচ্ছে না, আমি ক্রিকেটের বিরাট ভক্ত নই।” মেসি না রোনাল্ডো— এই মহাদ্বন্দ্বমূলক প্রশ্নের জবাবে কুশলী রাহুল, “আমি রোনাল্ডোকে বেশি ভালবাসি তাঁর ক্ষমাশীলতার জন্য। মেসি বড় ফুটবলার। আমি
নিজে ফুটবল দল করলে হয়তো মেসিকেই রাখব।”
নিজের রাজনৈতিক সত্ত্বার সমান্তরালে তিনি যে আরও বিভিন্ন সত্ত্বা বহন করেন সে কথাও আজ কিছুটা দার্শনিকের ঢংয়ে শুনিয়েছেন রাজীব-পুত্র। রাজনৈতিক নেতা না হলে কী হতেন তিনি? জবাবে তাঁর ব্যাখ্যা, “আমি ও ভাবে দেখি না বিষয়টাকে। রাজনীতিবিদ আমার একটা ফ্রেম। কিন্তু যখন আমি আমার ভাগ্নে ও তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন আমি এক জন শিক্ষক। যখন আমি রান্নাঘরে আমি এক জন রাঁধুনি। আমাদের প্রত্যেকেরই অনেকগুলি ফ্রেম রয়েছে। জীবনকে একটা যাত্রাপথ হিসেবেই দেখি। সেই যাত্রায় শিখতে শিখতে চলেছি।”
সাম্প্রতিক জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে রয়েছে ভারত বনাম ইন্ডিয়া নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্ন এসেছে। একটু হেসে রাহুলের তুখোড় জবাব, “ইন্ডিয়া দ্যাট
ইজ় ভারত।”