Pinarayi Vijayan

জয়ের আশা ফুরোচ্ছে, সম্মেলনে কাঠগড়ায় বিজয়নের সরকার

সম্মেলন-পর্বে নানা প্রশ্নে দলের অবস্থান বা দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ জানানো সিপিএমে বরাবরের রেওয়াজ।

Advertisement
সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৫
পিনারাই বিজয়ন।

পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র।

ব্যতিক্রমী নজির গড়ে রাজ্যে পরপর দু’বার ক্ষমতায় এসেছিল বাম সরকার। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সরকারই প্রত্যাশা পূরণে ‘চরম ব্যর্থ’ বলে সমালোচনার ঝড় উঠছে সিপিএমের সম্মেলনে! কিছু জেলায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে মঞ্চে বসে শুনতে হচ্ছে দলের স্থানীয় স্তরের নেতাদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা। পরের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক ফ্রন্ট এলডিএফের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, প্রকারান্তরে এমন কথাও মুখ্যমন্ত্রী-সহ দলের শীর্ষ নেতাদের সামনে বলে দিচ্ছেন কেউ কেউ!

Advertisement

সম্মেলন-পর্বে নানা প্রশ্নে দলের অবস্থান বা দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ জানানো সিপিএমে বরাবরের রেওয়াজ। শাসক দলের অন্দরেই রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভও বাম রাজনীতিতে নতুন নয়। তবে কেরলে এ বারের সম্মেলন প্রক্রিয়ায় সেই অসন্তোষ ও ক্ষোভের সুর অনেক চড়া মাত্রায় উঠছে বলে সিপিএমের অন্দরের মত। তহবিলের অভাবে জনকল্যাণমূলক বহু প্রকল্প আটকে যাওয়া নিয়ে যেমন সম্মেলনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসছে, তেমনই স্বরাষ্ট্র দফতর তথা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চাঁছাছোলা ভাষায় সরব হচ্ছেন প্রতিনিধিরা। বাংলার মতো কেরলেও বিধানসভা ভোট আসছে ২০২৬ সালে। তার আগে সম্মেলনে দলের নিচু তলার যে মনোভাব ধরা পড়ছে, তাতে ভোটের লড়াই শুরুর আগেই ‘নেতিবাচক’ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে অবশ্য তাঁরা বলছেন, বামপন্থী দলে আত্মসমালোচনা হয়েই থাকে।

বাংলার পাশাপাশি কেরলেও এখন চলছে জেলা সম্মেলন। সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে এই দুই রাজ্যই সব চেয়ে বেশি প্রতিনিধি পাঠায়। সূত্রের খবর, কোল্লম, তিরুঅনন্তপুরম, ওয়েনাড়, পালাক্কাড, পাতানামতিট্টার মতো একের পর এক জেলায় সমালোচনার মুখে পড়ছে বিজয়নের সরকার। তার মধ্যে তীব্রতম সমালোচনা হয়েছে তিরুঅন্তপুরম জেলা সম্মেলনে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ও দলের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে এক প্রতিনিধি সরাসরি বলেছেন, ‘রেকর্ড গড়ে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য বিজয়ন সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। প্রথম সরকার সুশাসন দিয়েছিল বলেই দ্বিতীয় সরকার সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সরকার যে ভাবে চলছে, তাতে তৃতীয় বারের জন্য জয়ের স্বপ্ন না-দেখাই ভাল’! প্রতিনিধিদের বড় অংশের অভিযোগ, পরিষেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের কাজ হতাশাজনক।

আর্থিক সঙ্কটে থাকা কেরলের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিশেষ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে না বলে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব দক্ষিণী এই রাজ্যের বাম সরকার। কিন্তু একাধিক জেলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের অনেকে মত দিয়েছেন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল নানা ক্ষেত্রেই মানুষের হাতে পৌঁছনো বন্ধ হয়ে রয়েছে। সাধারণ শ্রমিক-সহ প্রান্তিক মানুষের পেনশন আটকে গিয়েছে। কেন্দ্র সহায়তা করছে না বলে রাজ্য কাজ করতে পারছে না, এই যুক্তি জনমানসে বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। লোকসভা ভোটে কেরলে বামেদের বিপর্যয়ের পিছনে এই কল্যাণমূলক প্রকল্প স্তব্ধ হয়ে যাওয়া বড় কারণ বলেই ওই প্রতিনিধিদের মত। তাঁদের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে বিধানসভা ভোটে তার আরও বেশি প্রভাব পড়বে।

পুলিশের কাজে অসন্তোষের পাশাপাশি একাধিক জেলার লোকাল ও শাখা কমিটির নেতারা এক সুরে অভিযোগ করেছেন বিরোধীদের প্রতি ‘পক্ষপাতিত্ব’ নিয়ে! তাঁদের দাবি, সমস্যা নিয়ে থানায় গেলে বিরোধী কংগ্রেস বা বিজেপি নেতারা সুরাহা পাচ্ছেন কিন্তু শাসক দল হয়েও সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব তা পাচ্ছেন না। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ-প্রশাসনের বড় অংশ কি বিরোধীদের হয়ে কাজ করছে? ছাত্র ও যুব সংগঠনের আন্দোলনে নজর কমছে বলেও দলের একাংশের বক্তব্য।

সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্পাদক গোবিন্দন অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দলীয় কর্মীদের সমালোচনা মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের দিকে নির্দিষ্ট নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আত্মসমালোচনা থেকেই দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন হয়। ব্যক্তিবিশেষকে নিয়ে আলাদা চর্চার কারণ নেই।’’

Advertisement
আরও পড়ুন