জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তানি সেনা। —ফাইল চিত্র।
আবার অশান্ত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার রাতেও সেখানে গোলাগুলি চালাল পাকিস্তান। অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে রাতভর গুলি চালিয়েছে পাক সেনা। ভারতীয় সেনাঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। তবে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি।
শনিবার সকালে নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় সেনা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘২৫ এবং ২৬ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি ঘাঁটিগুলি থেকে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালানো হয়েছে। একই ভাবে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সেনা জওয়ানেরাও। কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।’’
অভিযোগ, ভারতীয় সেনাকে লড়াইয়ে প্ররোচিত করতেই ছোটখাটো গুলি চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখায় বড় কোনও হামলা এখনও তারা করেনি। তবে অনবরত গুলি চলতে থাকায় রাতভর ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জওয়ানদের। তাঁরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছেন। এই নিয়ে পর পর দুই রাতে পাকিস্তানের তরফ থেকে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করা হল। বৃহস্পতিবার রাতেও একই ভাবে তারা ভারতীয় সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাতে ২৬ জনের (২৫ ভারতীয় এবং এক নেপালি) মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, যত দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া না-থামাচ্ছে, তত দিন সিন্ধু চুক্তি স্থগিত থাকবে। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে ভারত থেকে তাঁদের চলে যেতেও বলা হয়েছে। সেনা সূত্রে খবর, দুই দেশের সম্পর্কের ক্রম অবনতির এই পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণরেখায় অশান্তি সৃষ্টি করে পাকিস্তান আসলে বুঝতে চাইছে, ভারতীয় সেনা কতটা প্রস্তুত। তাদের সক্রিয়তা এবং সতর্কতা যাচাই করা হচ্ছে রাতভর গুলি চালিয়ে। তবে ভারত সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে বলেই দাবি সেনা সূত্রে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে পাকিস্তানের পরাজয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশের পর হিমাচল প্রদেশের শিমলায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির ফলে যে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারিত হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তান, উভয় পক্ষই তা মেনে চলবে। পারস্পরিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও কোনও পক্ষ একতরফা ভাবে এর পরিবর্তন চাইবে না। তার পরেও অবশ্য পাকিস্তান একাধিক বার এই শর্ত লঙ্ঘন করেছে। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর নতুন করে শিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ইসলামাবাদ।