Howrah-Mumbai CSMT Train Accident

‘যখন পর পর দুর্ঘটনায় রেল বিপর্যস্ত, তখন রিল তৈরিতে ব্যস্ত পার্ট টাইম রেলমন্ত্রী’! অশ্বিনীকে খোঁচা বিরোধীদের

ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচারের মতো মন্ত্রকের দায়িত্বও বৈষ্ণবের হাতে রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব কেন এক জন আংশিক সময়ের মন্ত্রীর হাতে দেওয়া হবে?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৪
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। —ফাইল ছবি।

সোশ্যাল মিডিয়া তিনি ভালই বোঝেন! অনেকেই বলেন, রিল বানিয়ে প্রচারে থাকায় পারদর্শী তিনি।

Advertisement

তাই দুর্ঘটনা ঘটলে মোটরবাইকের পিলিয়নে বসে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। ঢুকে পড়েন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের ইঞ্জিনের তলায়। তাতে খবরের কাগজে ছবি হয়। ‘করিৎকর্মা’ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে নিয়ে প্রশংসার বন্যা বয়ে যায় সমাজমাধ্যমে। তবু বিরোধীরা তাঁকেই ‘পার্ট টাইম রেলমন্ত্রী’ বলে খোঁচা দেন। কারণ রেলমন্ত্রী রিল বানালেও তাঁর সময়কালে রেল দুর্ঘটনা থেমে থাকে না। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, দেড় মাসে যাত্রিবাহী ট্রেনে তিনটি দুর্ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অসংখ্য। আজ ঝাড়খণ্ডে হাওড়া-মুম্বই মেলের দুর্ঘটনার পরে অশ্বিনীকে কটাক্ষ করে আম আদমি পার্টি এক্স সমাজমাধ্যমে লিখেছে, ‘রেলমন্ত্রীর রিল বানানো আর প্রধানমন্ত্রীর জুমলাবাজি ছাড়া অন্য কোনও কিছু করার সময় নেই।’’

আজই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে দাবি করেন, তাঁর আমলে রেলে বরাদ্দ আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোদী যখন ওই দাবি করছেন, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই হাওড়া-সিএসএমটি মুম্বই মেল চক্রধরপুরের কাছেলাইনচ্যুত হয়ে মারা গিয়েছেন দু’জন। প্রাক্তন রেলকর্তাদের অনেকেরই আক্ষেপ, কার্যত মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে রেলসফর। যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে যে কোনও লাইনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর জন্য রেল মন্ত্রক-সহ মোট তিনটি মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা অশ্বিনী বৈষ্ণবের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে।

ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচারের মতো মন্ত্রকের দায়িত্বও বৈষ্ণবের হাতে রয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব কেন এক জন আংশিক সময়ের মন্ত্রীর হাতে দেওয়া হবে? শুধু বিরোধী শিবির নয়, বিজেপির অভ্যন্তরেও এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে। বিজেপির অনেকেরই বক্তব্য, দলে কি উপযুক্ত ব্যক্তির এতই অভাব ঘটেছে যে, এক জনকে রেল-সহ তিনটি মন্ত্রকের দায়িত্ব দিতে হবে? অশ্বিনী প্রাক্তন আমলা হতে পারেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সচিবালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর থাকতে পারে, কিন্তু তিনি কী এমন দক্ষতা দেখিয়েছেন যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে তিনটি মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন! বিশেষ করে যেখানে একের পর রেল দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, সেখানে কেন অশ্বিনীকে সরানো হবে না, তা নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি শরিক দলের নেতারাও ঘরোয়া ভাবে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। আজ রেল বাজেট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘এই রেলমন্ত্রী কুর্সি বাঁচাতে ব্যস্ত, জান বাঁচাতে নয়। লাইন পরীক্ষা কি আদৌ হচ্ছে? কবচ সুরক্ষা ব্যবস্থা কবে রেলে শুরু হবে, তার কোনও দিশা নেই।’’

১৯৯৪ ব্যাচের প্রাক্তন আমলা অশ্বিনীর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, রেলের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিবর্তে কসমেটিক সার্জারি বা রূপসজ্জার উপরে জোর দেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতে একই ভুল করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। এঁরা সকলেই রেলের সার্বিক পরিকাঠামো— যেমন নতুন লাইন পাতা, বৈদ্যুতিকরণ, সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা, আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করা ইত্যাদির উপরে তেমন জোর না দিয়ে নিজের নিজের রাজ্যে নতুন ট্রেন চালিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়াতে চেয়েছিলেন। বৈষ্ণবও কার্যত একই পথে হেঁটে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ছেড়ে জোর দেন বন্দে ভারত ট্রেন চালুর উপরে। তার ফলে দেশের বিভিন্ন শহরের মধ্যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হয়তো চালু হয়েছে, কিন্তু গত তিন বছরে অশ্বিনীর আমলে প্রবল উপেক্ষিত হয়েছে রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা। ধীরে ধীরে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রেলের পরিচালন ব্যবস্থাতেও। ফি-দিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে রেল। বিরোধীদের মতে, রেলের নিচুতলার কর্মী, যাঁরা রেলের সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের নিয়োগও দশ বছর বন্ধ। এর প্রভাব পড়ছে রেল-নিরাপত্তায়। পরিসংখ্যান বলছে, গত বারো দিনে হওয়া দুর্ঘটনার অর্ধেকের কারণ হল, কামরা বেলাইন হওয়া। আর তা মূলত লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক ভাবে না হওয়া, লাইনের ফাটল, লাইনের তলা থেকে জমি ধসে যাওয়ার মতো কারণেই হয়ে থাকে।

কিন্তু সে সবে নজর দেওয়ার সময় কি আদৌ আছে রেলমন্ত্রীর?

আরও পড়ুন
Advertisement