বৈঠক শেষে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার তুলে দেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: সংগৃহীত।
নোবেলজয়ী বাঙালি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। তবে নিজের গবেষণা নিয়ে বৃহত্তর কাজের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাছলেন বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশকে। জানা গিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে কী ভাবে প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়েই এই গবেষণা। এই গবেষণাকে বাস্তবের মাটিতে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্যই বাছা হয়েছে উত্তরপ্রদেশকে। এ নিয়ে অভিজিতের সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজে ব্যস্ত রয়েছি। এখনই গবেষণার বিষয় নিয়ে বিশদে কথা বলা যাবে না।’’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কথা বলেন অভিজিৎ। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার যোগীর অযোধ্যা সফর ছিল। তবে অভিজিতের আগ্রহ জানার পরে তিনি অযোধ্যা সফর পিছিয়ে দেন বলে জানা যায়। অভিজিতের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। লখনউয়ের ৫ নম্বর, কালিদাস মার্গে সকাল ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অভিজিতের সঙ্গে কথা বলেন যোগী। সেখানে তাঁর গবেষণার বিষয় এবং কেন তিনি উত্তরপ্রদেশেই কাজ করতে চান, তা জানান অভিজিৎ। সবটা শোনার পরে অভিজিৎকে স্বাগত জানিয়েছেন যোগী। এমনটাই জানা গিয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই উত্তরপ্রদেশে কাজ শুরু করতে পারেন অভিজিৎ।
এই সাক্ষাৎ নিয়ে জগন্নাথ জানান, গবেষণার কাজে উত্তরপ্রদেশ সরকার যে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে, তা জানিয়ে দিয়েছেন যোগী। জগন্নাথ বলেন, ‘‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল প্রয়োগ করে গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজ কী ভাবে করা যায় তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে কাজ করতে চান অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি সমস্ত রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’’
প্রসঙ্গত, অভিজিৎ তাঁর এই গবেষণার কাজ কিছুটা পশ্চিমবঙ্গেও করেন বলে জানা যায়। কিন্তু এখন গবেষণা যে পর্যায়ে তাতে উত্তরপ্রদেশই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ক্ষেত্র বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। উত্তরপ্রদেশের জনবিন্যাসের কারণেই এই রাজ্য দেশের মধ্যে সবচেয়ে উপযুক্ত বলেই তিনি মনে করেন বলে জানা গিয়েছে। জাতীয় ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে গেলে দেশের বৃহত্তম এই রাজ্য থেকেই সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে তাঁর ধারণা। এই গবেষণা সম্পূর্ণ হলে প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষের কাছে খুব সহজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। জ্বর থেকে পেটের অসুখ বা আরও বড় কিছুর জন্য গ্রামের মানুষও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন। আগামী দিনে উত্তরপ্রদেশে ফলিত স্তরের গবেষণা শুরু হলে সেই রাজ্যের প্রান্তিক মানুষেরা গ্রামে বসেই শহরের ভাল চিকিৎসকদের পরামর্শ পেতে পারবেন। পরবর্তী কালে যা গোটা দেশের চিকিৎসা পরিষেবায় আমূল বদল আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ বৈঠকে শেষে অভিজিৎকে উপহারও দিয়েছেন যোগী। অভিজিতের হাতে তিনি ‘এক জেলা, এক পণ্য’ প্রকল্পে তৈরি হওয়া ফিরোজাবাদে তৈরি বংশীধারী কৃষ্ণমূর্তি উপহার তুলে দেন। সঙ্গী জগন্নাথকেও উপহার দিয়েছেন যোগী।