প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
গোটা বছর জুড়েই দেশে ভোট। চলতি বছরে জম্মু-কাশ্মীর-সহ ন’রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। যার মধ্যে ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যে ভোট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই ভোট ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোজগার মেলার উদ্যোগকে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আজ সব মিলিয়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২৪টি রাজ্যের প্রায় ৭১ হাজার ব্যক্তির হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। যা নিয়ে কংগ্রেসের কটাক্ষ, ভোট আসতেই চাকরি দেওয়ার কথা মনে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর! উনি ভুলে যাচ্ছেন, বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই চাকরি কবে হবে? তা ছাড়া রোজগার মেলার মাধ্যমে যে নিয়োগ হচ্ছে, তা সবই রুটিন শূন্য পদে নিয়োগ। এতে সরকারের বাড়তি কৃতিত্ব কোথায় বলে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
গত বছর জুন মাসে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে দশ লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার। যা পালনে গত বছর গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশ নির্বাচনের আগে রোজগার মেলার আয়োজন করেছিল কেন্দ্র। দু’দিন আগে ভোট ঘোষণা হয়েছে ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে। অর্থনীতির দুরাবস্থার কারণে তীব্র বেকারত্বের ফলে দেশের যুবসমাজের একটি বড় অংশ যে বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়েছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন মোদী। তাই অতীতের মতোই ভোটের আগে যুব সমাজের আস্থা ফেরাতে মোদীর ‘রোজগার মেলার নাটক’ শুরু হয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের টুইট, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, দেশে ৩০ লক্ষ সরকারি পদ খালি রয়েছে। আর আপনি কেবল ৭১ হাজার পদে নিয়োগ করলেন! আপনি তো বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ৮ বছরে সেই ১৬ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল— যুব সমাজকে সেই জবাব দিন।’’ অন্য দিকে মোদীর বক্তব্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে তাঁর সরকার সর্ব্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। রোজগার দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রোজগার মেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত যে বাস্তবায়িত হয়, রোজগার মেলার মাধ্যমে তা প্রমাণিত।
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও সংস্থায় যোগদানের লক্ষ্যে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগপত্র তুলে দেন। মত বিনিময় করেন চাকরিপ্রাপকদের সঙ্গেও। তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেন, ‘‘এই চাকরি কেবল ওই পরিবারের মধ্যেই নয়, লক্ষ লক্ষ পরিবারের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।’’ আজ চাকুরিপ্রাপকদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সুপ্রভা বিশ্বাস। তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়োগপত্র পেয়েছেন। আজ সুপ্রভার সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সুপ্রভা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালে তিনি ওই তরুণীকে নিজের পড়াশুনো চালিয়ে যাওযার উপর জোর দেন। সুপ্রভা ছাড়াও আজ নিয়োগপত্র পাওয়া শ্রীনগরের ফৈজল শওকত, মণিপুরের বানেই চৌং-এর সঙ্গে কথা বলেন মোদী। তাঁর পরামর্শ, সরকারি চাকরি শেষ কথা নয়। চাকুরিপ্রাপকদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপরে জোর দেন তিনি। যাতে তাঁরা নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মোদীর কথায়, এতে সেই প্রতিষ্ঠান ও দেশের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে যখন নিয়োগ সংক্রান্ত নানাবিধ দুর্নীতির কথা জনসমক্ষে আসছে, তখন রোজগার মেলার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নিয়োগ স্বচ্ছ ভাবে হওয়ায় চাকুরিপ্রার্থীরাও আনন্দিত বলে দাবি করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বচ্ছ ভাবে হচ্ছে।’’ পদোন্নতির বিষয়টিও আগের চেয়ে অনেক মসৃণ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নিয়োগপত্র পাওয়া নতুন চাকরিতে যোগদানকারীদের আজ মোদী ‘নাগরিকেরা সর্বদা ঠিক’— এই মানসিকতা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন। আজ যাঁরা নিয়োগপত্র পেয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর ইন্সপেক্টর, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্ট, গ্রামীণ ডাক সেবক, শিক্ষক, নার্স, সামাজিক সুরক্ষা অফিসার, ট্রেন চালক, টিকিট পরীক্ষক পদে চাকরি করবেন। বিরোধীদের বক্তব্য, যা নিয়োগ হচ্ছে সবই রুটিন। মোদী সরকার কেবল সবক’টি নিয়োগকে একত্রিত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।