Flood Situation in West Bengal

রাজ্যকে জানিয়েই ডিভিসি জল ছেড়েছে, দাবি কেন্দ্রের

ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির ফলে মাইথন-পাঞ্চেতের মতো ডিভিসি-র জলাধার থেকেও জল ছাড়াহয়েছে। এই জল রাজ্য সেচ দফতরের দুর্গাপুর ব্যারাজ দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:১২
বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারিতে বন্যা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারিতে বন্যা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসি-কে দোষারোপ করায় পাল্টা আক্রমণে গেল নরেন্দ্র মোদী সরকারের জল শক্তি মন্ত্রক। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসি-কে দুষে বলেছিলেন, ডিভিসি-র জলাধার থেকে জল ছেড়ে পরিকল্পিত ভাবে বাংলায় ‘ম্যান মেড বন্যা’ করা হচ্ছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি। সেই কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। জল ছাড়ার আগে রাজ্য প্রশাসনকে নিয়ম মেনে জানানোও হয়েছে।

Advertisement

ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির ফলে মাইথন-পাঞ্চেতের মতো ডিভিসি-র জলাধার থেকেও জল ছাড়াহয়েছে। এই জল রাজ্য সেচ দফতরের দুর্গাপুর ব্যারাজ দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে। কারণ সেখানেও জলের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। মমতা এর দায় ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের উপরে চাপিয়ে দেওয়ায় আজ কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডের রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। সেখানে কেন্দ্রীয় জল কমিশন ও ডিভিসি-র প্রতিনিধি থাকেন। এই কমিটিই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসি-র সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি ডিভিসি-র ওই কমিটি থেকে রাজ্য সরকার নিজের প্রতিনিধি তুলে নেবে? কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রকের কর্তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও তাঁদের বক্তব্য, প্রোটোকল মেনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের প্রশ্ন, নবান্ন আগে থেকে জল ছাড়ার খবর পেলেও তা স্বীকার করছে না কেন? ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার আগে ডিভিসি ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কখন কী পরিমাণ জল ছাড়া হবে, তা-ও আগেভাগে জানানো হয়েছে।

মমতা ডিভিসি-র পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেনের সরকারকেও দায়ী করে বলেছিলেন, ঝাড়খণ্ড সরকার নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে জল ছেড়েছে। জল শক্তি মন্ত্রকও যুক্তি দিয়েছে, ঝাড়খণ্ড সরকারের অধীন তেনুঘাট বাঁধ থেকে ৮৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এতে সমস্যা বেড়েছে। এই বাঁধটি দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটির আওতার বাইরে। বারবার বলা সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ড সরকার এ’টি দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটির অধীনে আনেনি।

কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, প্রথমে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও পরে ঝাড়খণ্ডের উপরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের দামোদর উপত্যকায় ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর ভাল বৃষ্টি হয়। তার পরে ঝাড়খণ্ডে ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর প্রবল বৃষ্টি হয়। ১৭ তারিখ থেকে বৃষ্টি কমে যায়। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল। দামোদরের সঙ্গে যুক্ত শীলাবতী, কংসাবতী, দ্বারকেশ্বর নদীতেও জল ভর্তি ছিল। ডিভিসি-র বাঁধে ৪ লক্ষ ২৩ হাজারকিউসেকের বেশি জল জমলেও মাত্র আড়াই লক্ষ কিউসেকের মতো জল ছাড়া হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় জলাধারে ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ১৬৩ কিউসেক জল জমলেও মাত্র ৯০,৬৬৪ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। ফলে ৭৮.৫ শতাংশ জলই ধরে রাখা হয়েছিল। ডিভিসি নিজে দায়িত্ব নিয়ে পাঞ্চেত জলাধারে মাত্রাতিরিক্ত জল ধরে রেখেছিল। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইথন-পাঞ্চেত থেকে আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হলেও ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে ৮০ হাজার কিউসেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement