Jammu-Kashmir Terror Attack

সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বন্‌ধ কাশ্মীরে

শোক আলাদা করে তীব্র ছিল খাস পহেলগামে। যে পর্যটন শহর কাল সকাল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড়ে ভিড়াক্কার ছিল, হঠাৎই সেখানে হাহাকারের অন্ধকার । দোকানপাট, হোটেল, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বন্ধ।

Advertisement
সাবির ইবন ইউসুফ
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:২৩

—ফাইল চিত্র।

পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হওয়ার পরের দিন এক অভূতপূর্ব শোক ও ক্ষোভের মধ্যে দিয়ে সর্বাত্মক বন্‌ধ পালন করছে কাশ্মীর। গত ৩৫ বছরের মধ্যে উপত্যকা এমন সর্বাত্মক বন্‌ধ দেখেনি। ধীরে ধীরে খানিকটা শান্তি ফিরে পাওয়া একটি অঞ্চলের সম্মিলিত ক্ষোভ এবং ভগ্ন হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটল এই বন্‌ধে।

Advertisement

গত কাল সন্ধ্যায় হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপত্যকার মসজিদগুলি প্রতিবাদ ও সংহতির স্লোগানে ফেটে পড়ে। লাউডস্পিকারে সকলকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। এর পরই স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বন্যা বইতে থাকে—বাজারহাট বন্ধ হয়েরাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থল থেকে পহেলগামের আলপাইন ঢাল পর্যন্ত শহর ও গ্রাম জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

শোক আলাদা করে তীব্র ছিল খাস পহেলগামে। যে পর্যটন শহর কাল সকাল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড়ে ভিড়াক্কার ছিল, হঠাৎই সেখানে হাহাকারের অন্ধকার । দোকানপাট, হোটেল, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রধান বাজারে একটি বিষণ্ণ মিছিলের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। ‘‘অপরাধীদের শাস্তি দাও’’ স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

আজও সেখানে প্রতিবাদ মিছিল বার হয়। স্লোগান ওঠে, ‘‘আমি ভারতীয়। হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ।’’

আজ শ্রীনগর-সহ জেলা সদর শহরগুলিতেও সর্বাত্মক বন্‌ধ হয়েছে। জরুরি পরিষেবার দোকান ছাড়া বন্ধ ছিল বাজারহাট। সরকারি পরিবহণ ছিল যৎসামান্য। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে সব পরীক্ষা স্থগিত ছিল। কাশ্মীরের প্রায় সব রাজনৈতিক দল— এনসি, পিডিপি, পিপলস কনফারেন্স, আপনি পার্টি বন্‌ধ সমর্থন করেছে। হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন মুতাহিদা মজলিস উলেমার মধ্যে একত্রিত হয়েছে অনেকগুলি ধর্মীয় সংগঠন। তারাও বন্‌ধকে পূর্ণ সমর্থন করেছে। বণিক সংস্থা কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ় এবং কাশ্মীর ট্রেডার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনও বন্‌ধের সমর্থনে ছিল। বন্ধ রাখা হয় সব বেসরকারি স্কুল।

হোটেলিয়ার ক্লাবের চেয়ারম্যান আসিফ বুরজ়া বলছিলেন, ‘‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এটি অর্থ বা পর্যটনের বিষয় নয়। আমাদের মাথা লজ্জায় হেঁট। পর্যটকেরা এখানে শান্তি ও সৌন্দর্য খুঁজতে এসেছিলেন। তাঁদের বাঁচাতে পারিনি। আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’’ আর এক হোটেল ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘আমরা পীড়িতদের সঙ্গে আছি। আমরা তাঁদের সঙ্গেই শোক প্রকাশ করছি। এ কেবল তাঁদের নয়, আমাদেরও ট্র্যাজেডি।’’ বিক্ষোভের সময় স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের পদক্ষেপের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছেন। ‘‘আমরা প্রথমে মানুষ। সেনাবাহিনীর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করব। গত কাল যা ঘটেছে তা ক্ষমা করা যাবে না’’, ঐক্য ও শান্তির স্লোগান তুলে এক বিক্ষোভকারী বলেছেন। কাশ্মীরের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ পর্যটন অনেক বছর পরে পুনরুজ্জীবনের মুখ দেখছিল। সেই দুর্বল অগ্রগতি এখন আবার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল।

দক্ষিণ কাশ্মীরে বাহিনী আজ থেকে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলি মনে করে যে আক্রমণটি সুপরিকল্পিত ছিল ও উপত্যকার বর্তমান শান্তি বিঘ্নিত করার লক্ষ্যেই এমন ঘটানো হয়েছে। এর পিছনে বিদেশে প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বিচলিত। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘আমাদের পর্যটকদের উপর এই হিংস্রতা একটি জঘন্য কাজ। দোষীরা মনুষ্যপদবাচ্য নয়। ঘৃণা ছাড়া কিছুই তাদের প্রাপ্য নয়।’’ আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে ও সুশৃঙ্খল ভাবে ফেরানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনিই জানান, আজ সকালে একমুখী যান চলাচলের জন্য ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক খোলা হয়েছে। অতিরিক্ত উড়ান চালানোর জন্য ডিজিসিএ এবং অসামরিক বিমান মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। রাস্তা খালি রাখা ও দুর্গতদের সাহায্যের ব্যাপারে সকলকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছেন ওমর।

Advertisement
আরও পড়ুন