জঙ্গিহানায় নিহত আদিল হোসেনের পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ছবি: রয়টার্স।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলা চালানোর পর পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গিরা। ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণে তা-ই পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র একটি প্রতিবেদনে।
মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় অন্তত ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। হামলার দায় নিয়েছে পাক জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স’ (টিআরএফ)। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জম্মুর কিশওয়ার এলাকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের কোকেরনাগ হয়ে বৈসরনে এসেছিল জঙ্গিরা। হামলার পর আবার তারা উপত্যকা ঘিরে থাকা পাইন বনে মিলিয়ে গিয়েছিল।
‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সূত্রের দাবি, ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই হামলাকারী জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ বলছে, হামলার পর পাকিস্তানের মুজফ্ফরাবাদ এবং করাচির সেফ হাউসে আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গিরা।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বৈসরনের একটি রিসর্টের সামনে ঘোড়ায় চড়ছিলেন কয়েক জন পর্যটক। বাকিরা ইতিউতি ছড়িয়ে খাওয়াদাওয়া, গল্প করছিলেন। আচমকাই জংলা পোশাক পরা, মুখ ঢাকা কয়েক জন সশস্ত্র জঙ্গি পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সামনে যে পর্যটককেই তারা দেখেছে, নাম-ধর্মপরিচয় জিজ্ঞেস করে কপালে গুলি করেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘অন্তত জনা পাঁচেক জঙ্গি এসে, ধীরেসুস্থে খুনগুলো করে আবার পাহাড়ি ঢাল বেয়ে চলে যায়। দেখে মনে হয়েছে, যেন ওরা আগে থেকে জানত, কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, কাকে কাকে মারতে হবে।’’
ফরেন্সিক বিশ্লেষণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতেও পাকিস্তান-যোগ সামনে এসেছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জঙ্গিরা যে ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তা সাধারণত সেনা ব্যবহার করে। শুধু তা-ই নয়, যে কায়দা এবং কৌশলে হামলা চালানো হয়েছে, তা কাঁচা হাতের কাজ নয়। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই হামলার নেপথ্যে রয়েছে। বাইরে থেকে তারা নানা রকমের সাহায্য পেয়েছিল বলে দাবি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বুঝেশুনে, পরিকল্পনা করে, সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র এনে এই হামলা চালানো হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল— উপত্যকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট করা।’’
পাকিস্তান অবশ্য ইতিমধ্যেই দাবি করেছে যে, পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাওয়াজা আসিফ বলেছেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগ নেই। আমরা এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করি।’’