—প্রতীকী চিত্র।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস (আইসিআরআইইআর) তার নতুন প্রতিবেদনে একটি চমকপ্রদ পরিসংখ্যান সামনে এনেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের গণবণ্টন ব্যবস্থার (পিডিএস) মাধ্যমে প্রদত্ত খাদ্যশস্যের প্রায় ২৮ শতাংশ কখনওই উদ্দিষ্ট সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছয় না। যার ফলে বছরে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ৬৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ, ৮১ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য বরাদ্দ রেশনের এই শস্যের একটা অংশ খোলা বাজারে চলে আসে, রফতানিও হয়ে যায়। প্রতি বছর এ ভাবে ২ কোটি টন চাল-গম স্রেফ হারিয়ে যায়।
আইসিআরআইইআর-এর তরফে এই রিপোর্টের অন্যতম লেখক অশোক গুলাটি বলেছেন, ‘‘প্রতি বছর এটি একটি বিশাল ক্ষতি। রেশনের এই শস্য কোথায় যাচ্ছে? সম্ভবত সেগুলি খোলা বাজারে যাচ্ছে বা বাইরে রফতানি করা হচ্ছে।’’ এই রিপোর্টে ২০২২ সালের অগস্ট থেকে ২০২৩-এর জুলাই পর্যন্ত গৃহস্থালি খরচ সমীক্ষা (এইচসিইএস) এবং ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার মাসিক অফটেক ডেটা বিশ্লেষণ করে এই চলমান সমস্যাকে তুলে ধরেছে। অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও ভর্তুকির শস্য ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়ে সরকারের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেই চলেছে এবং গণবণ্টন ব্যবস্থার কার্যকারিতা ব্যাহত করেই চলেছে বলে রিপোর্টে দাবি। ২০১১-১২ সালে এই অপচয়ের হার ছিল ৪৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে রেশনের দোকানে পয়েন্ট-অফ-সেল (পিওএস) মেশিনের প্রবর্তনের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলিয়েছে। কিন্তু দৃশ্যতই সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারেনি। বছরে ২ কোটি টন চাল-গম অভাবীদের কাছে পৌঁছচ্ছে না।
অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং গুজরাতের মতো কিছু রাজ্যে এই ভাবে শস্য বেহাত হওয়ার হার বেশি বলে দেখা গিয়েছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিকাঠামোর অভাব একটা বড় কারণ। বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। যেমন বিহার ২০১১-১২ সালে ৬৮.৭ শতাংশ থেকে এই গায়েবের হার ২০২২-২৩ সালে ১৯.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। একই সময়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এই হার ৬৯.৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৯ শতাংশে নিয়ে এসেছে৷
এখন উত্তরপ্রদেশে রেশনের শস্য গায়েবের এই হার সবচেয়ে বেশি। ৩৩ শতাংশ। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তুকির শস্য খোলা বাজারে চলে যাচ্ছে। রেশন কার্ডের সাথে আধার সংযুক্তিকরণের পরেও সমস্যা পুরো মেটেনি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম’ সত্ত্বেও সমস্যা রয়ে গিয়েছে। গণবণ্টনে দুর্নীতি মোকাবিলা করার জন্য আরও ভাল নজরদারি এবং গভীর কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। অভাবীদের আরও সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা, ফুড স্ট্যাম্প-ভাউচার সিস্টেম বা সরাসরি নগদ হস্তান্তরের মতো বিকল্প খোঁজা দরকার বলেও জানানো হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা