রাতারাতি বদলে গেল প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো স্টেশনের নামও ছবি পিটিআই।
শহরের নাম বদলে অযোধ্যা হয়েছিল তিন বছর আগেই। যোগী রাজ্যে নামবদলের হিড়িকে এ বারে রাতারাতি বদলে গেল প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো স্টেশনের নামও! ইতিহাসের ফৈজাবাদ স্টেশন হয়ে গেল অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন।
ক্ষুব্ধ, বিস্মিত, বিরক্ত ওঁরা অনেকেই। প্রশ্ন তুলছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। কেউ কেউ আবার স্বাগতও জানাচ্ছেন। বছরের পর বছর যাঁরা ফৈজাবাদ স্টেশনে এবং স্টেশন লাগোয়া চত্বরে কাজ করছেন, সেই রিক্সাচালক, কুলি, বা ছোট দোকানীদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। তাঁদের প্রশ্ন, মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই তো আরও একটা স্টেশন রয়েছে অযোধ্যা বলে। সেটাও বড় স্টেশন। তা হলে আরও একটা অযোধ্যা স্টেশন কেন? এতে তো বিভ্রান্তি বাড়বে।
ওঁদেরই একজন, সাধু রাম। ১২ বছর বয়স থেকে স্টেশন চত্বরে কাজ করতে করতে এখন স্টেশন চত্বরেই রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বয়স ৫৫। ফৈজাবাদের নাম বদলে বিরক্ত সাধু রামের বক্তব্য, ‘‘নাম বদলানোর কোনও দরকাই ছিল না। অযোধ্যা স্টেশন আগে থেকেই আছে। এখন তো বিভ্রান্তি বাড়বে।’’ হচ্ছেও। তাতে সমস্যা বাড়ছে বই কমছে না। স্থানীয়দের তো বটেই, পর্যটকদেরও সমস্যা হচ্ছে। অযোধ্যা স্টেশনে নামার বদলে নেমে পড়ছেন ১০ কিলোমিটার দূরের অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে। আরও একজন, রাজেশ কুমার! স্টেশনেরই কুলি। নতুন নাম নিয়ে বিরক্ত তিনিও। ইতিমধ্যেই স্টেশনের বোর্ড বদলে, বড় বড় ফেস্টুন দিয়ে নাম বদলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সব ফেস্টুনে বড় করে রামমন্দিরের ছবিও ছাপা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে গত সাড়ে চার বছরে একের পর এক ইতিহাসের পাতায় থাকা মুসলিম জায়গার নাম বদলে গিয়েছে হিন্দু নামে। ইলাহাবাদ, মুঘলসরাই আগেই নাম বদলেছে। কিন্তু রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসছে। তার উপরে রামমন্দিরের হাওয়া। তাই অযোধ্যা নামের একটি স্টেশন আগে থেকে থাকলেও ইতিহাসের ফৈজাবাদ স্টেশন হয়ে গেল অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন। বিরোধীদের কটাক্ষ, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ইস্তক এই একটি কাজ খুব মন দিয়ে করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। মেরুকরণের পালে হাওয়া দিতেই এই কাজ করেছেন বিজেপির এই মুখ্যমন্ত্রী।
তার ফল কিছুটা পেয়েওছে বিজেপি। রাজ্যে মেরুকরণের হাওয়া জোরদার হয়েছে এই নামকরণের হাত ধরেই। তেমনই একজনের বক্তব্য, ‘‘রামের নগরী অযোধ্যার সব কিছুতেই অযোধ্যা থাকা দরকার।’’
ক্ষুব্ধ ইতিহাসবিদদের একাংশের বক্তব্য, শুধু মাত্র ধর্মীর মেরুকরণে সুড়সুড়ি দিতেই এই নাম বদল। এর মধ্যে দিয়ে জায়গাটার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া চেষ্টা হয়। কিন্তু সেটা ক্ষতিকর। আগামী দিনের ইতিহাসের ছাত্রদের জন্যও তা ভাল নয়। একই সঙ্গে তাঁদের আশঙ্কা, আগামী দিনেও এই প্রবণতা জারি থাকলেও দ্রুত রাজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত সব মুসলিম নামই বদলে দেওয়া হবে। লেখিকা রানা সফভির বক্তব্য, কয়েক শতাব্দী ধরে দুই যমজ শহর ফৈজাবাদ ও অযোধ্যা এ দেশের ‘গঙ্গা-যমুনা তেহজিব’ বা সাংস্কৃতির মেলবন্ধনের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনটা নয় যে ফৈজাবাদের আগের নাম ছিল অযোধ্যা। এই দু’টো পৃথক শহর, যাদের ভিন্ন সংস্কৃতি এবং এই নিয়েই তারা হাত ধরাধরি করে কয়েক শতাব্দী কাটিয়েছে। নাম বদলালেও ফৈজাবাদ থেকেই যাবে মানুষের মধ্যে।