ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়ক। —ফাইল চিত্র।
ক্ষমতা হারানোর এক বছরের মধ্যেই ভাঙনের মুখে ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডি। গত সপ্তাহে বিজেডির ১৩ জন প্রথম সারির নেতা রাজধানী ভুবনেশ্বরের একটি হোটেলে নবীনকে বাদ দিয়ে বৈঠক করেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের একাংশের বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেডি প্রধানও।
বিদ্রোহীদের নেতা তথা তিন বারের বিধায়ক নৃসিংহ শাহু বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমরা কে কার সঙ্গে দেখা করব, তা নিয়ে কেউ নির্দেশ দিতে পারেন না।’’ সরাসরি কারও নাম না করলেও তাঁর নিশানায় ছিলেন নবীন। এক ধাপ এগিয়ে প্রবীণ বিজেডি নেতা এবং আট বারের বিধায়ক রণেন্দ্রপ্রতাপ সোঁয়াই সোমবার নবীনকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘কয়েক জন ব্যক্তি বিজেডিকে দখল (হাইজ্যাক) করতে সক্রিয় হয়েছেন। আমরা তা হতে দেব না।’’
রণেন্দ্রপ্রতাপ এ ক্ষেত্রে ‘নবীন-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন আইএএস অফিসার পান্ডিয়ানকেই নিশানা করেছেন বলে অনুমান। রাজ্যসভা সাংসদ দেবাশিস সামন্তরায় এবং প্রাক্তন মন্ত্রী প্রতাপ জেনা, বিধায়ক প্রফুল্ল শ্যামল ও বদ্রী পাত্র সরাসরি ওয়াকফ বিল নিয়ে ‘অস্পষ্ট অবস্থান’ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নবীনের বিরুদ্ধে। ওড়িশায় ২৪ বছরের মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম তাঁর হাতে গড়া দলের অন্দরে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা মনে করছেন।
নবীনের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে গত দু’দশকে রামকৃষ্ণ পট্টনায়ক, বিজয় মহাপাত্র, দিলীপ রায়, বৈজয়ন্ত পণ্ডা, ভর্তৃহরি মহাতব, তথাগত শতপথী এমনকি, সিদ্ধান্ত মহাপাত্র, অনুভব মহান্তির মতো অভিনেতা-রাজনীতিকও বিজেডি ছেড়েছেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে ওড়িশার বিধানসভা ভোট হয়েছিল। সেখানে নবীনের দল ক্ষমতা হারায়। লোকসভায় একটি আসনও জিততে পারেনি। এর পরে দুই রাজ্যসভা সাংসদ, মমতা মহন্ত ও সুজিত কুমার বিজেডি ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে একঝাঁক নেতা বিদ্রোহী হলে নবীনের দল অস্তিত্বসঙ্কটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রসঙ্গত, গত বছর লোকসভা ভোটে ওড়িশায় ২১টি আসনের ২০টি গিয়েছিল বিজেপির ঝুলিতে। অবশিষ্ট আসনটিতে কংগ্রেস জিতেছে। পাশাপাশি, ১৪৭ আসনের ওড়িশা বিধানসভায় ৭৮টিতে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে পদ্ম। বিজেডির ৫১ এবং কংগ্রেস ১৪ জন বিধায়ক রয়েছেন। বেশ কিছু দিন ধরেই নবীন অসুস্থ। তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও অনেক সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলে ভাঙন ধরলে বাংলার পড়শি রাজ্যে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কংগ্রেসের উত্থানের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।