২০১৩ সালের নাবালিকা ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত আসারাম বাপু। —ফাইল চিত্র।
জোধপুর ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত গুরু আসারাম বাপুকে আবার অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে গুজরাত আদালত। তাঁর জামিনের খবরে আতঙ্কিত ধর্ষিতার পরিবার। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও দিন তাঁদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারেন আসারাম। তাঁর সমর্থকেরা পরিবারের ক্ষতি করতে পারেন। কী ভাবে ধর্ষক বার বার জামিন পাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ধর্ষিতার বাবা।
উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরের তরুণীকে ২০১৩ সালে জোধপুরের আশ্রমে ধর্ষণ করেন আসারাম। সেই সময়ে নির্যাতিতার বয়স ছিল ১৬। ২০১৮ সালে এই ঘটনায় আসারামকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার তিনি অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ৮৬ বছরের বৃদ্ধের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছিল। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩১ মার্চ। তার আগেই আসারামের আইনজীবী গুজরাত হাই কোর্টে আবার আবেদন জানান। অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন আসারামের আইনজীবী। শুক্রবার সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে।
আদালতের নির্দেশের পর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আসারামকে যখন জেলে পাঠানো হল, আমরা জিতেছিলাম। কিন্তু এখন তো উনি সবাইকে হাত করে নিয়েছেন। আদালত বার বার ওঁর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করছে, এতে আমি স্তম্ভিত। প্রথমে সাত দিন, তার পর ১২ দিন, তার পর আড়াই মাস আর এখন তিন মাস!’’
নিজেদের আইনজীবীর দিকেও আঙুল তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা। তাঁর অভিযোগ, আইনজীবী তাঁদের প্রতারণা করেছেন। আসারামের জামিনের বিরুদ্ধে আবেদনই জানাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বার বার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আমাদের আইনজীবী আদালতে জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে কোনও কথাই বললেন না। সেই কারণেই আদালত জামিন দিয়ে দিল। আমরা সমস্ত কাগজে সই করে দিয়েছিলাম। আমাদের আইনজীবী শুধু আমাদের ঘোরালেন। কাজের কাজ করলেন না। উনি আমাদের ঠকালেন।’’
অভিযোগ, আসারাম জেলের বাইরে বেরোনোর পর থেকেই তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, তিনি আর ভিতরে ঢুকবেন না। সেই কথাই সত্যি হচ্ছে, আক্ষেপ নির্যাতিতার বাবার। তাঁর কথায়, ‘‘উনি তো জোধপুর থেকে ইনদওর, উজ্জয়িনী থেকে সুরাত— ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করছেন। এটা কী ধরনের অসুস্থতা? আমাদের পরিবারের বিপদ এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। যখন তখন উনি আমাদের সঙ্গে যা খুশি করে ফেলতে পারেন। ঈশ্বরই আমাদের ভরসা।’’
আসারামের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। হৃদ্যন্ত্র এবং কিডনিতে সমস্যা আছে তাঁর। জোধপুরের একটি আয়ুর্বেদিক সেন্টারে সবে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। শেষ হতে আরও তিন মাস সময় লাগবে। তার পরেই চিকিৎসার প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর হয় আসারামের।
নির্যাতিতার পরিবারকে অবশ্য পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এসপি রাজেশ দ্বিবেদী জানান, নির্যাতিতার বাড়িতে এক জন নিরাপত্তারক্ষী এবং দু’জন বন্দুকধারীকে নিয়োগ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। স্থানীয় থানাকেও ওই বাড়ির দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।