Kerala CPM

বাংলায় জামানত গিয়েছে, কেরলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সিপিএমের, কেন্দ্রীয় কমিটি জানল বৈঠকের মাঝে

ত্রিশূরের কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে সিপিএম ছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, বহু মানুষকে ‘ভুয়ো’ ঋণ দেওয়া হয় ওই ব্যাঙ্কের তরফে। ২০২৩ সালে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে ইডি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১৮:৪৪
ED attached property worth Rs 73 lakh of CPM in Kerala

পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল চিত্র।

বাংলায় সিপিএমের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। কেরলে বাজেয়াপ্ত হল সম্পত্তি!

Advertisement

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে শুক্রবার প্রারম্ভিক বক্তৃতায় কেরলে দলের অবস্থা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সূত্রের খবর, ইয়েচুরি এ-ও বলেছেন, দলের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন কোনও কার্যকলাপ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। দিল্লিতে যখন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ হেন ময়নাতদন্ত চলছে, তখন একে গোপালন ভবনে কেরল থেকেই খবর পৌঁছল, সমবায় দুর্নীতি মামলায় দলের ৭৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

ত্রিশূরের কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতিতে সিপিএম ছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, বহু মানুষকে ‘ভুয়ো’ ঋণ দেওয়া হয় ওই ব্যাঙ্কের তরফে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০২৩ সালে তার তদন্ত শুরু করে ইডি। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ওই তদন্তে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। এ বার সিপিএমেরও স্থানীয় একটি কমিটির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যাতে গচ্ছিত রয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা। ১৩ লক্ষ টাকার একটি জমিও বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। মোট ৭৩ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, যাঁরা ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছিলেন, তাঁদেরই অনেকে সিপিএমের দলীয় তহবিলে টাকা দিয়েছেন।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, রাজ্য সম্পাদক এমভি গোবিন্দন-সহ রাজ্যের প্রথম সারির সিপিএম নেতারা এখন দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের মধ্যেই শনিবার ওই খবর পান তাঁরা। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরেই দিল্লি থেকে রাজ্যে থাকা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হয় বিবৃতি জারি করতে। সেইমতো কেরল সিপিএমের ফেসবুক পেজ থেকে দুপুরে একটি বিবৃতি পোস্ট করা হয়। যার মোদ্দা কথা, ইডি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করতেই এ হেন পদক্ষেপ করেছে।

কেরলে সিপিএমের একাধিক নেতার নাম গত কয়েক বছর ধরেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। বাদ নেই মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বিজয়নও। অভিযোগ, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মেয়ে টি বীণার সংস্থাকে কোচি মিনারেল-সহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজের বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন। বিজয়ন এবং তাঁর কন্যার জবাব তলব করেছে কেরল হাই কোর্ট। বীণার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক ম্যাথু কুঝালানদান। তাঁর আর্জি ছিল, আদালতের নজরদারিতে বীণার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। নিম্ন আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল। তার পরে কংগ্রেস নেতা মামলা করেন হাই কোর্টে। উল্লেখ্য, বিজয়নের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কোচির এক ব্যক্তি মামলা করেছিলেন। যদিও কয়েক মাস আগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ম্যাথুর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতে বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলাটি উত্থাপিত হয়েছে।

দিল্লিতে সিপিএমের পার্টি দফতরের এক পদাধিকারীর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে যে ঘুণ ধরা শুরু হয়েছিল, কেরলেও একই জিনিস শুরু হয়েছে। পর পর দু’বার সরকার গড়ে তা আরও গতি পেয়ে গিয়েছে।’’

কেরলের রেওয়াজ হল পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলানো। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছিল ২০২১ সালে। রীতি ভেঙে পর পর দু’বার ক্ষমতায় আসে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা যা ভোট পেয়েছিল, ২০২৪ সালে তার থেকে প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছে তাদের। তিন বছরে ১০ শতাংশ ভোট কমে যাওয়াকে ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসেবেই দেখছেন সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব। ওই বিষয়ে দিল্লিতে যখন পর্যালোচনা চলছে, তখন জানা গেল দলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি!

আরও পড়ুন
Advertisement