অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির ঋষিকোন্ডা প্রাসাদ। — ফাইল চিত্র।
দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের আগে বিস্তর চর্চা হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিলাসবহুল বাসভবন নিয়ে। কেজরীর প্রাসাদকে ‘শিশমহল’ বলে কটাক্ষ করে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস। এ বার দিল্লির সেই ‘শিশমহল বিতর্ক’ শুরু হল অন্ধ্রেও। এ বার নিশানায় অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির ঋষিকোন্ডা প্রাসাদ।
একদা জগন্মোহনের দফতর তথা বাসভবন হিসাবে পরিচিত এই প্রাসাদ এখন শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবেই নয়, রাজ্যের রাজনৈতিক তরজারও কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই ভবন নির্মাণে পরিবেশগত নিয়মবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে। সোনার কারুকাজ, ইতালিয়ান মার্বেলের মেঝে থেকে বিলাসবহুল এবং বহুমূল্য আসবাবপত্র— কী নেই সেই প্রাসাদে! বিশাখাপত্তনমের ঋষিকোন্ডায় অন্তত ১০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত চারটি ব্লক নিয়ে গড়া হয়েছে এই প্রাসাদ। এমনকি, প্রাসাদচত্বরে রয়েছে একাধিক পাকা রাস্তা, পয়ঃপ্রণালী, পানীয় ও ব্যবহার্য জল সরবরাহের পৃথক ব্যবস্থা এবং একটি ১০০ কিলোভোল্টের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনও! পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ঋষিকোন্ডার খ্যাতি থাকলেও জগন্মোহনের এই প্রাসাদ এখনও জনসাধারণের নাগালের বাইরেই।
সম্প্রতি এ হেন প্রাসাদেরই নাম জড়িয়েছে নির্মাণ-বিতর্কে। অভিযোগ, উপকূলীয় নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল (সিআরজ়েড)-এর নিয়মবিধি লঙ্ঘন করেছে জগন্মোহনের প্রাসাদ। নানা মহলে দাবি, ঋষিকোন্ডা পাহাড়ের প্রায় অর্ধেক জুড়ে খননকাজ চালিয়ে এস্টেটটি নির্মাণ করা হয়েছিল, যা পরিবেশগত ভাবেও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি রেকর্ড বলছে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রক ২০২১ সালের মে মাসে শুধুমাত্র পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে প্রাসাদ তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, সেই আইনি নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে জগন্মোহনের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাসাদটি তৈরির পরিকল্পনা করে পূর্ববর্তী ওয়াইএসআরসিপি সরকার। জগন্মোহনের প্রাসাদকে নিশানা করে আক্রমণ শানিয়েছে সে রাজ্যের তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। জগন্মোহনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগও তুলেছে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর প্রশাসন।
উল্লেখ্য, দিল্লি বিধানসভা ভোটের আগে কেজরীওয়ালের সিভিল লাইন্সের বাংলো নিয়েও একই ধাঁচের অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বিপুল অর্থ খরচ করে বাংলোর সংস্কার করা হয়েছে। কেজরীর বাংলোকে ‘শিশমহল’ বলে কটাক্ষ করে ভোটপ্রচার পর্বে আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আক্রমণ শানিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। নানা মহলে কটাক্ষের মুখে পড়েছিল নিজেকে ‘আম আদমি’ (সাধারণ মানুষ) বলে দাবি করা কেজরীওয়ালের বিলাসবহুল জীবনযাপন। সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। কেজরীকে খোঁচা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে উনি বলেছিলেন সরকারি বাংলো পর্যন্ত নেবেন না। আর ক্ষমতায় এসে নিজের সরকারি আবাস সাজাতে বিপুল অর্থ নয়ছয় করেছেন।’’ কেজরীর পর এ বার একই অভিযোগ উঠল জগনকে নিয়েও।