‘জনতা কার্ফু’র ১ বছর। প্রতীকী চিত্র
তখন ভারতে করোনা সংক্রমণ সবে বাড়তে শুরু করেছে। যদিও তখন অনেক রাজ্যেই সে ভাবে থাবা বসায়নি করোনা ভাইরাস। অধিকাংশ দেশবাসীর তখনও এই অতিমারির প্রভাব সম্পর্কে বিশেষ ধারণা ছিল না। আর ঠিক সেই সময় ২০২০ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন, ২২ মার্চ ‘জনতা কার্ফু’ পালন করা হবে। সেই ‘জনতা কার্ফু’ ঘোষণার এক বছর পূর্ণ হল আজ, সোমবার। আর এক বছর পরে ঠিক সেই আগের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ফের নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।
গত বছর ২১ মার্চ নিজের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী জানান, ২২ মার্চ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খুব জরুরি কাজ ছাড়া কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বের হন। তখনও দেশের মানুষ বুঝতে পারেননি তার দু’দিন পরেই দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে দেবেন মোদী।
‘জনতা কার্ফু’র দিন বিকেল ৫টায় করোনা যোদ্ধাদের সম্মানে কাঁসর, ঘণ্টা, থালা বাজানোর আবেদন করেন মোদী। বিকেলে দেখা গিয়েছিল, গোটা দেশ বিপুল উৎসাহে প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। অনেকে আবার দল বেঁধে কাঁসর, ঘণ্টা বাজাতে রাস্তায় নেমে পড়েন। সেই ঘটনা নিয়ে বিতর্কও ছড়িয়েছিল।
‘জনতা কার্ফু’র পরে ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পরেই দেখা যায় ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। যত দিন গিয়েছে, তত আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব রকমের পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন, বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কখনও ট্রেনে, কখনও বা পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেক শ্রমিকের। পরের দিকে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করতে দেখা যায় কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে। দেশে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। নবান্নের এক উচ্চপদস্থ আমলার বিদেশ ফেরত ছেলের শরীরে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপরে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে বাংলাতেও।
এই সংক্রমণের অন্যতম খারাপ প্রভাব পড়েছিল দেশের অর্থনীতিতে। তাই বাধ্য হয়েই একটা সময়ের পড়ে আনলক পর্যায় শুরু হয়। ধীরে ধীরে অর্থনীতির বিভিন্ন পরিষেবা শুরু করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসে কাজকর্মও শুরু হয়। অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ায় এই সময়ের মধ্যে অনেকে চাকরি হারান। ফলে দেশে বেকারত্বের সমস্যা বাড়ে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই টিকা তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করে বিভিন্ন দেশ। ভারতেও সেই কাজ শুরু হয়। অবশেষে ১৬ জানুয়ারি থেকে দেশে টিকাকরণ শুরু হয়। অনেকটাই কমে যায় সংক্রমণ। বাড়তে থাকে সুস্থতার হার।
কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ। সোমবার দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৯৫১। সবথেকে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রের। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। এই অবস্থায় সেই সব রাজ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, টিকা নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে। আর এই নতুন সংক্রমণের মাঝেই এক বছর আগের সেই ‘জনতা কার্ফু’র স্মৃতি উঠে আসছে নেটাগরিকদের মধ্যে।
শেখ সোহেল নামে এক নেটাগরিক একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ছাদের উপর থালা বাজানো চলছে। সেইসঙ্গে রামদাস অঠয়ালের ‘গো করোনা গো’ গানও চলছে।
#JanataCurfew
— Shaikh Sohail (@mr_sohailarbaz) March 22, 2021
This day, last year.
Happy #JanataCurfew anniversary. pic.twitter.com/TaHRyX7bbS
Corona go Corona go
Go Corona go Corona
Crona go song written by @
Ramdas athawale sir
‘হাসনা জরুরি হ্যায়’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে এক বয়স্ক মহিলা দুই হাতে দুটি থালা নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে জোরে জোরে বাজাচ্ছেন।
Janta Curfew Anniversary.…. pic.twitter.com/InqcrId7zd
— HasnaZarooriHai (@HasnaZaruriHai) March 20, 2021
এ ছাড়াও সে দিনের থালা-বাটি-শাঁখ বাজানোর ভিডিও, ছবি অনেকেই ভাগ করে নিয়েছেন নেটমাধ্যমে।