গুজরাতে সেই জাতপাতের সমীকরণকেই প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছে কংগ্রেস। ছবি সংগৃহীত।
শেষ বার গুজরাতে মাধবসিন সোলাঙ্কির ‘খাম’ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পেয়েছিল কংগ্রেস। খাম— অর্থাৎ ক্ষত্রিয়, হরিজন বা দলিত, আদিবাসী ও মুসলিম ভোটকে এককাট্টা করার সমীকরণ।
গুজরাতে প্রায় আড়াই দশক কংগ্রেস ক্ষমতার বাইরে। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস ‘খাম’-এর বদলে ‘খাপ’ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। সে বার কংগ্রেসের রণকৌশল ছিল ‘খাপ’, অর্থাৎ ক্ষত্রিয়, হরিজন বা দলিত, আদিবাসী ও পাতিদার ভোটকে এককাট্টা করা। এ বারও গুজরাতে সেই জাতপাতের সমীকরণকেই প্রধান হাতিয়ার করতে চাইছে কংগ্রেস। পুরনো ‘খাম’ ও ‘খাপ’-কে যোগ করে একই বন্ধনীতে আনতে চাইছে তারা। ক্ষত্রিয় বা ওবিসি, হরিজন বা দলিত, আদিবাসী, মুসলিম ও পটেল ভোটকে স্থানীয় স্তরে নিজেদের বাক্সে এনে ফেলাটাই কংগ্রেসের লক্ষ্য।
আজ রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ৫০০ টাকার রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার, তরুণদের ১০ লক্ষ চাকরি, ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপির ডাবল ইঞ্জিনের ভাঁওতা থেকে গুজরাতকে বাঁচিয়ে কংগ্রেস রাজ্যে পরিবর্তনের উৎসব পালন করবে। কিন্তু রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা বলছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির থেকেও জাতপাতের সমীকরণই আসল ভরসা। পাঁচ বছর আগে ক্ষত্রিয় তথা ওবিসি নেতা অল্পেশ ঠাকোর, দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী, পটেল নেতা হার্দিক পটেল এবং আদিবাসী নেতা ছোটু বাসবা কংগ্রেসের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন। অল্পেশ, হার্দিক এখন বিজেপিতে। সেই মাপের নেতা কংগ্রেসে নেই। তাই রাজ্য স্তরে এ নিয়ে হইচই না করে গ্রামে গ্রামে, বুথ স্তরে এই জাতপাতের সমীকরণ গড়তে তুলতে চাইছে কংগ্রেস।
চিন্তা একটাই। তা হল, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি এবং আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, আম আদমি পার্টিও কংগ্রেসের মতোই দলিত, আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে থাবা দিতে চাইছে। অন্য দিকে ওয়েইসি মুসলিম, দলিত ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করছেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের তাই আশঙ্কা, একাধিক রাজ্যের মতো গুজরাতেও কেজরীওয়াল ও ওয়েইসির জন্য বিজেপি-বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে গিয়ে আখেরে বিজেপিরই সুবিধা হয়ে যাবে। তাদের ভোট কমলে বা একই থাকলেও আসন বেড়ে যেতে পারে। সেই আশাতেই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ গুজরাতে গিয়ে রেকর্ড সংখ্যক আসনে জয়ের কথা বলছেন। এআইসিসি-তে গুজরাতের ভারপ্রাপ্ত নেতা রঘু শর্মা বলেন, “কেজরীওয়াল, ওয়েইসি আসলে বিজেপির বি-টিম। গোয়ায় আম আদমি পার্টি যত ভোট পেয়েছিল, ঠিক সেই ভোটেই আমরা হেরেছি। গুজরাতেও কেজরীওয়াল, ওয়েইসি একই খেলায় নেমেছেন।’’ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস বুথ স্তরে বেশি নজর দিতে চাইছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে দলের প্রধান ভরসা আদিবাসী ভোট। রাজ্যে জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ আদিবাসী হলেও গুজরাতের পাঁচটি জেলায় আদিবাসী ভোট ৫০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। আরও পাঁচটি জেলায় আদিবাসী ভোট ৫০ শতাংশের নীচে হলেও ২০ শতাংশের উপরে। ২৭টি আসন জনজাতি সংরক্ষিত। আদিবাসী এলাকাগুলিতে পার-তাপি-নর্মদা নদী জুড়ে দেওয়ার প্রকল্পের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের আন্দোলন হয়েছে। কংগ্রেসের সুখরাম রাথওয়া, অনন্ত পটেলের মতো আদিবাসী বিধায়ক তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যার চাপে প্রকল্পে স্থগিতাদেশ জারি করতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি সরকার। ভোটে তার সুফল আশা করছে কংগ্রেস।
পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক পটেল বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেস এ বার সৌরাষ্ট্রের পটেল নেতা পরেশ ধানানির উপরে ভরসা করছে। ক্ষত্রিয় ভোটের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভরসা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জগদীশ ঠাকোর। এ ছাডাও ওবিসি কোলি পটেল ভোটের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভরসা কার্যকরী সভাপতি ঋত্বিক মাকওয়ানা। জিগ্নেশ মেবাণী ছাড়াও বিধানসভার উপদলনেতা শৈলেশ পারমারের উপরে দলিত ভোটের জন্য ভরসা করছে কংগ্রেস। মুসলিম ভোটের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভরসা ইমরান খেড়াওয়ালা, গিয়াসুদ্দিন শেখ ও মহম্মদ জাভেদ পীরজাদার মতো বিধায়কেরা।