Mallikarjun Kharge

কট্টর কংগ্রেসিদেরই সামনে আনার দাবি এআইসিসি বৈঠকে

বুধবার কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনের শুরুতে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে যখন এই ঘোষণা করলেন, তখন হাজার দুয়েক এআইসিসি-র সদস্য দু’হাত তুলে তা স্বাগত জানালেন।

Advertisement
প্রেমাংশু চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৩
মল্লিকার্জুন খড়্গে।

মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসে থেকেও যাঁরা দলের কাজে হাত লাগাচ্ছেন না, তাঁদের বিশ্রামে পাঠানো দরকার। যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন না, তাঁদের অবসর দেওয়া হবে।

Advertisement

বুধবার কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনের শুরুতে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে যখন এই ঘোষণা করলেন, তখন হাজার দুয়েক এআইসিসি-র সদস্য দু’হাত তুলে তা স্বাগত জানালেন। খড়্গের প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় এই একবারই সাবরমতীর তীরে কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশন হাততালিতে ফেটে পড়ল।

খড়্গে শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন, এ বার কংগ্রেসের সংগঠন মজবুত করতে জেলা সভাপতিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তাই জেলা সভাপতিদের নিয়োগ এআইসিসির নির্দেশিকা মেনে নিরপেক্ষ ভাবে হবে। দায়িত্ব পাওয়ার এক মাসের মধ্যে বুথ কমিটি, ব্লক কমিটি, জেলা কমিটি ভাল ভাল নেতাদের নিয়ে তৈরি করতে হবে। এতে কোনও পক্ষপাতিত্ব চলবে না। ভোটের প্রার্থী বাছাইয়েও জেলা সভাপতিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। অধিবেশনের শেষে রাহুল গান্ধীও একই সুরে জানিয়ে দিলেন, জেলা কংগ্রেস কমিটিকেই তিনি সংগঠনের ভিত হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন।

বুধবার সারাদিন কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে গোটা দেশের কংগ্রেস নেতারা একই সঙ্গে রাহুল-বন্দনা ও মোদী-সমালোচনা চালালেন। কিন্তু তারই ফাঁকে একাধিক নেতা দাবি জানিয়ে দিলেন, রাহুল-খড়্গে যা বলছেন, তা যেন কার্যকর হয়। সচিন পাইলট, শশী তারুর— দুই ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা আজ অধিবেশনের মূল প্রস্তাব পেশ করেছেন। তা নিয়ে আলোচনায় অসমের গৌরব গগৈ দাবি তুলেছেন, যে সব নেতার এক পা কংগ্রেসে, অন্য পা অন্য কোনও দলে, তাঁদের চিহ্নিত করে তাড়ানো হোক। রাহুল গান্ধী নিজেই এর আগে গুজরাত সফরে এ কথা বলেছিলেন। যারা লাঠি, ধমক, প্রলোভন সত্ত্বেও কংগ্রেসে রয়েছেন, সেই কট্টর কংগ্রেসিদের সামনে নিয়ে এলেই দল আসন্ন বিধানসভা ভোটে জিতবে। কানপুরের কংগ্রেস নেতা অলোক মিশ্র একই সুরে প্রশ্ন তুলেছেন, যে কংগ্রেস নেতার এক ছেলে সমাজবাদী পার্টিতে, অন্য ছেলে বিজেপিতে, তাঁকে কি জেলা কংগ্রেস সভাপতি করা উচিত? অলোকের দাবি, জেলা কংগ্রেস সভাপতিরা নিজেরা যেন ভোটে প্রার্থী না হন। দিল্লির রাজেন্দ্র গৌতম বলেছেন, বুথ স্তরের কর্মীদের যদি শীর্ষনেতারা একটু পিঠ চাপড়ে দেন, তা হলেই ২০২৯-এ কংগ্রেস গোটা দেশে ক্ষমতায় চলে আসবে। রাজস্থানের রেহানা চিস্তিরও দাবি, কর্মীদের ক্ষমতায়ন করলে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে।

রাহুল গান্ধী আজ ফের বার্তা দিয়েছেন, দলিত, মুসলিম, উচ্চবর্ণের সঙ্গে ওবিসিদেরও সঙ্গে টানতে হবে কংগ্রেসকে। ওবিসিদের আসল সংখ্যা নির্ধারণে জাতগণনার দাবি তোলেন রাহুল। নিশানা করেন নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি-আরএসএসকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের সামনে মোদীর ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতি কোথায় চলে যায় বলে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

২০২৯-এর আগে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে ধাক্কা দিতে ২০২৭-এ গুজরাতের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস বিজেপিকে হারাবে বলে রাহুল নিজেই সংসদে দাবি করেছিলেন। আজ সেই লক্ষ্যে কংগ্রেসের জাতীয় অধিবেশনে মূল প্রস্তাবের সঙ্গে ‘গুজরাতে কেন কংগ্রেসকে প্রয়োজন’ শীর্ষক পৃথক প্রস্তাব পাশ হয়েছে। গুজরাতের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শক্তিসিন গোহিলের দাবি, কংগ্রেস গুজরাতে ৪০ শতাংশ ভোট পায়। সামান্য ভোট বাড়লেই কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। গুজরাত থেকে কংগ্রেসের একমাত্র সাংসদ গেনিবেন ঠাকোরের অভিযোগ, গোটা দেশে যে ‘গুজরাত মডেল’-এর প্রচার হচ্ছে, তা আসলে মহিলা-শিশুদের অপুষ্টিতে ভোগার মডেল। গত লোকসভা ভোটে মোদীকে বারাণসীতে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলা অজয় রাই অভিযোগ তুলেছেন, গুজরাতের নরেন্দ্র মোদী ‘গঙ্গা-যামুনি তেহজ়িব’-এর বারাণসীতে গিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করছেন। রাহুল রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা টিকারাম জুলির উদাহরণ তুলে বলেন, জুলি দলিত বলে তিনি পুজো দেওয়ার পরে বিজেপি-আরএসএস মন্দির গঙ্গাজল দিয়ে ধুইয়েছে। রাহুলের মন্তব্য, “এটা হিন্দুধর্ম নয়। আমরাও হিন্দু। আমরা সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখি।” অধিবেশন শেষে রাহুলের বার্তা, “লড়তে হবে। আমরাই জিতব। বিজেপি-আরএসএসের কী হাল করতে চলেছি, দেখবেন।”

Advertisement
আরও পড়ুন