Narendra Modi

নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি, সংরক্ষণের প্রশ্নে নিশানা কেন্দ্রকে

গত সেপ্টেম্বর মাসে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বিতর্কে দেশের পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধিত্ব বোঝাতে গিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, দেশে নীতি নির্ধারণের জন্য ৯০ জন আমলা রয়েছেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৮
নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

যুগ্ম-সচিব ও অধিকর্তা পদে ৪৫ জনকে আমলা পদে সরাসরি নিয়োগের বিজ্ঞাপন ঘিরে ফের বিতর্কে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, আজ প্রকাশিত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই নিয়োগে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের যে সুবিধা পিছিয়ে থাকা সমাজের জন্য রয়েছে, তা প্রযোজ্য হবে না। বিরোধী কংগ্রেস ও আরজেডি নেতৃত্বের মতে, আমলাতন্ত্র তথা সরকারি চাকরিতে পিছিয়ে থাকা সমাজের প্রতিনিধিত্ব রুখতেই সরাসরি উচ্চ পদে নিয়োগ শুরু করা হয়েছে। বিরোধীরা মনে করছেন, আজকের ওই বিজ্ঞাপন জাতিগত সমীক্ষার দাবিকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের প্রশ্ন, এক জন ওবিসি প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি কী ভাবে নিজের সমাজের সঙ্গে এমন বৈষম্য করতে পারেন!

Advertisement

গত সেপ্টেম্বর মাসে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বিতর্কে দেশের পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধিত্ব বোঝাতে গিয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, দেশে নীতি নির্ধারণের জন্য ৯০ জন আমলা রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে শুধুমাত্র তিন জন ওবিসি সমাজের। দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা যেখানে ওবিসি সমাজের, সেখানে তাঁদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে ওই সংখ্যা অপমানজনক। সেই সময়েই তিনি দ্রুত জাতিগত সমীক্ষার দাবি করেছিলেন। রাহুলের দাবি, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিগত সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। তা হলে দেশে ওবিসি জনসংখ্যা কত রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। রাহুল-সহ বিরোধীদের দাবি, জাতিগত সমীক্ষা করে তার ভিত্তিতে নতুন করে সংরক্ষণের আওতা বাড়ানো হোক।

বিজেপির আশঙ্কা, জাতিগত সমীক্ষা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে দেশে অর্ধেকের বেশি মানুষ ওবিসি সমাজের। সে ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ কমিয়ে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের হার বাড়াতে হবে সরকারকে। যাতে উচ্চবর্ণের ভোট ব্যাঙ্ক বিজেপির পিছন থেকে সরে যাওয়ার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই নতুন করে সংরক্ষণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি রয়েছে আরএসএসের।

এই আবহে আজ ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) একটি বিজ্ঞাপনে জানিয়েছে, যুগ্ম-সচিব পদে ১০ জন এবং ডিরেক্টর পদে ৩৫জনকে সরাসরি নিয়োগ করা হবে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে, তা প্রযোজ্য হবে না বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সরাসরি উচ্চপদে যোগদান (ল্যাটারাল এন্ট্রি) ব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু ওই পদক্ষেপ সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে শেষ করার প্রচেষ্টা বলেই দাবি কংগ্রেসের। দলের মুখপাত্র পবন খেড়া বলেন, ‘‘রাহুলজী ঠিক বলেছেন। এই সরকার সরাসরি উচ্চ পদ যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে শেষ করে দিতে চাইছে।’’ পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘২০১৭-’২৩ সাল পর্যন্ত সরাসরি উচ্চ পদে (যুগ্ম-সচিব, ডিরেক্টর, সহ-সচিব) ৫২ জন যোগ দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে এক জনও সংরক্ষিত শ্রেণির নন। এখন আবার ৪৫ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে। যেখানে সংরক্ষণের নিয়ম খাটবে না। ফলে বঞ্চিত হবে পিছিয়ে পড়া সমাজ।’’ সরকারি চাকরি সত্ত্বেও কেন সংরক্ষণের নিয়ম খাটবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

আরজেডি শিবিরের বক্তব্য, জাতিগত সমীক্ষা হলেই এই বৈষম্য রোখা সম্ভব। জাতিগত সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়ে যাবে কোনও শ্রেণির জন্য কত সংখ্যক সংরক্ষণের প্রয়োজন। তেজস্বী যাদব বলেন, “আজকের বিজ্ঞাপন অনুযায়ী সরাসরি উচ্চ পদে যোগদানের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে না। যদি পরীক্ষার মাধ্যমে ৪৫ জনকে নিয়োগ করতে হত তা হলে ওবিসি, তফসিলি জাতি, জনজাতি সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ম মতো চাকরি দিতে হত। সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া সমাজ থেকে অন্তত ২২-২৩ জন সুযোগ পেতেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়া সমাজ যাতে সংরক্ষণের সুবিধা না-পেতে পারে, সেই জন্য এ ভাবে সরাসরি উচ্চ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে আমলতন্ত্র থেকে দূরে রাখতে এটি অত্যন্ত পরিকল্পিত, ধূর্ত পদক্ষেপ। দেশের ওবিসি প্রধানমন্ত্রী দেশের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও গরিবদের অধিকার হরণ করে চলেছেন।”

আরও পড়ুন
Advertisement