বিহারের অমিত কুমার। ছবি: সংগৃহীত।
সাল ২০২২। বিহারের ভাগলপুরের অমিত কুমারের বাড়িতে খুশির খবর এল। সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে ভাগলপুরের একটি স্কুলে যোগ দেন অমিত। মাসিক বেতন ৮০০০ টাকা। কিন্তু সরকারি স্কুলের শিক্ষক হয়েও সংসার চালাতে এখন একটি অনলাইন খাবার সংস্থার ডেলিভারি বয়ের কাজ নিতে হয়েছে তাঁকে।
সরকারি চাকরি পেয়ে মুখে হাসি ফুটলেও কিন্তু সেই চাকরি করে সংসার টানতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘আড়াই বছর ধরে একই বেতনে শিক্ষকতা করে চলেছি। অন্য শিক্ষকেরা যেখানে মাসে ৪২ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন, সেখানে আমার মতো পার্শ্বশিক্ষকেরা মাত্র ৮ হাজার টাকায় শিক্ষকতা করে চলেছি।’’ শুধু তা-ই নয়, মাঝেমাঝে বেতনও ঠিক মতো পাচ্ছেন না বলেও দাবি অমিতের। এ বছরের শুরুতে চার মাস বেতনই পাননি। ফলে সংসার চালাতে ধারদেনা করতে হয়েছে। কখনও বন্ধুদের কাছ থেকে, কখনও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিতে হয়েছে। ফলে সেই ধার শোধ কী ভাবে করবেন, তা নিয়েই ক্রমে দুশ্চিন্তা বাড়ছিল।
কী করবেন এই ভেবে যখন দিশাহারা, তখন তাঁর স্ত্রী পরামর্শ দেন অনলাইন খাবার সরবরাহকারী সংস্থায় কাজ করলে কেমন হয়! শিক্ষকতার পর যে সময় বাঁচে, সেই সময়েই এই কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এ ভাবেই অমিতের জীবনে শুরু হল জীবন নির্বাহের আর এক নতুন সংগ্রাম। তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রীর পরামর্শ মেনে অনলাইনে খোঁজা শুরু করি এই কাজে কোনও নির্দিষ্ট সময় রয়েছে কি না। কিন্তু যখন জানতে পারি নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই, তখনই নিজের নাম নথিভুক্ত করি অনলাইন খাবার সরবরাহকারী একটি সংস্থায়।’’ অমিত আরও বলেন, ‘‘সকালে স্কুলে শিক্ষকতার কাজের পর বিকেল ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খাবার ডেলিভারি এজেন্টের কাজ করা শুরু করি।’’
সরকারি চাকরি পাওয়ার আগে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করতেন অমিত। ২০১৯ সালে তিনি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষায় বসেন। তার পরই ২০২১ সালে কোভিডের কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। সংসার টালমাটাল হয়ে যায় অমিতের। টানা কয়েক মাস আর্থিক ভাবে কষ্ট করতে হয়। কিন্তু ২০২২ সালে আবার খুশির খবর আসে অমিতের সংসারে। সরকারি স্কুলে পার্শ্বশিক্ষকের চাকরি পান। কিন্তু তার পরেও আর্থিক টানাটানিতে দ্বিতীয় কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান অমিত।