Seema Haider

পাক সেনার উর্দি পরে ছবি, ভারতীয় সেনায় যোগাযোগ, মুখে ইংরেজি বুলি! সীমাকে নিয়ে সীমাহীন জটে এটিএস

সীমা হায়দারের ভারতে অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। জট ছাড়াতে তদন্তে নেমেছে উত্তরপ্রদেশ এটিএস। সীমা আসলে কে? সাধারণ পাক বধূ না গুপ্তচর? উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৫:১০
ATS is questioning Seema Haider regarding photographs and social media connection, sources

পাক বধূ সীমা হায়দারের ভারতে অনুপ্রবেশ দিয়ে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

পাক বধূ সীমা হায়দারের ভারতে অনুপ্রবেশ দিয়ে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। জট ছাড়াতে তদন্তে নেমেছে উত্তরপ্রদেশ এটিএস থেকে শুরু করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। সীমা আসলে কে? ভারতীয় প্রেমিকের টানে সীমান্ত পার করে আসা সাধারণ পাক বধূ না পাকিস্তানি গুপ্তচর? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সূত্রের খবর, সম্প্রতি এমন একটি ছবি এটিএসের হাতে এসেছে, যেখানে সীমাকে পাক সেনাবাহিনীর উর্দিতে দেখা গিয়েছে। এমনকি, একাধিক ভারতীয় সেনা জওয়ান এবং নয়ডার বহু যুবকের সঙ্গে তাঁর সমাজমাধ্যমে পরিচয় ছিল বলেও এটিএস সূত্রে খবর। আর সেই কারণেই নাকি সীমার উপর সন্দেহ বাড়ছে তদন্তকারী আধিকারিকদের।

Advertisement

এটিএস সূত্রে খবর, পাক সেনার উর্দিতে তাঁর ছবি প্রসঙ্গে সীমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, তিনি বার বার আলাদা আলাদা উত্তর দিয়েছেন। সূত্রের খবর, কখনও সেই ছবি যে তাঁর, সে কথা মানতে অস্বীকার করেছেন সীমা। আবার কখনও সেই ছবি তাঁর ভাইয়ের উর্দি পরে তোলা বলে জানিয়েছেন। এমনকি, ওই উর্দি তাঁর ভাইয়ের বন্ধুর বলেও নাকি এক বার দাবি করেছেন সীমা। ভারতীয় সেনা জওয়ান এবং দিল্লি-এনসিআর এলাকার যুবকদের সঙ্গে তাঁর সমাজমাধ্যমে যোগ নিয়েও নাকি কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।

সীমা এটিএসকে নাকি জানিয়েছেন যে, ভারতে আসার আগে ১২ লক্ষ টাকায় তিনি পাকিস্তানে একটি বাড়ি বিক্রি করেছিলেন। এবং সেই টাকাতেই তিনি মোবাইল, পাসপোর্ট এবং বিমানের টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু এটিএস মনে করছে, পাকিস্তানে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন সীমা। কোনও বাড়িও তিনি বিক্রি করেননি। এ ছাড়াও সীমার পাসপোর্ট এবং টিকিট নিয়েও তদন্তকারী আধিকারিকদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে বলে এটিএস সূত্রে খবর।

সূত্রের খবর, সীমার থেকে প্রাপ্ত নগদ এবং অ্যাকাউন্টের লেনদেন নিয়েও নাকি তদন্ত শুরু করেছে এটিএস। সীমার স্বামী গোলাম হায়দারকে নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে তদন্তকারীদের মনে। সীমা পাকিস্তান থেকে চলে আসার পর থেকে স্ত্রীকে ফেরানোর দাবিতে গোলাম বার বার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু বিগত কয়েক দিন ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলেই নাকি জানতে পেরেছে এটিএস। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন ধরার জন্য মেসেজও পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

পাশাপাশি, সীমা তদন্তকারী আধিকারিকদের জানিয়েছেন, তিনি পঞ্চম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তাঁর ইংরাজি বুলি এবং হাবভাব দেখে তদন্তকারীরা মনে করছেন, সীমা উচ্চশিক্ষিত এবং বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাঁর হাতে বেশ কয়েকটি কাটা-পোড়ার দাগ রয়েছে। সীমার দাবি, সেগুলি গোলামের অত্যাচারের চিহ্ন। কিন্তু দাগগুলি ‘বিশেষ’ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় হয়েছে কি না, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এটিএস।

উল্লেখযোগ্য যে, মঙ্গলবার রাতে সীমা, তাঁর প্রেমিক সচিন, সচিনের বাবা এবং সীমার সন্তানদের নিয়ে নয়ডা অফিস থেকে বার হয় এটিএসের দল। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে দলটি সবাইকে রাবুপুরা থানায় নিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, অনলাইন গেম পাবজি খেলার সময় ২০১৯ সালে সচিনের সঙ্গে পরিচয় হয় সীমার। সেখান থেকে প্রেম। ২২ বছরের যুবকের প্রেমে পড়ে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসেন ৩০ বছরের সীমা। শুধু একা নন। সঙ্গে ছিল তাঁর চার সন্তান, যাদের সবার বয়সই সাত বছরের কম। ভিসা ছাড়া নেপালের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে ভারতে প্রবেশ করার অভিযোগে ৪ জুলাই গ্রেফতার হন সীমা। তাঁকে আশ্রয় দিয়ে গ্রেফতার হন সচিন এবং তাঁর বাবা নেত্রপাল। পরে জামিনে ছাড়াও পান তাঁরা।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সীমা দাবি করেন, তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি আর তাঁর পদবি ব্যবহার করবেন না বলেও জানান। তাঁর কথায়, ‘‘সীমা নামটি হিন্দু এবং মুসলমান যে কোনও ধর্মের মেয়েরই হয়। তাই আমি এখন থেকে শুধুই সীমা। অথবা, নিজেকে সীমা সচিন বলে পরিচয় দেব। আমার সন্তানদেরও নাম পরিবর্তন করে রাজ, প্রিয়ঙ্কা, পরি এবং মুন্নি রেখেছি।’’ সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র সঙ্গে কথা বলার সময় সীমা জানিয়েছেন, তিনি এখন প্রতি দিন ঈশ্বরের পুজো করেন এবং হাত জোড় করে সকলকে নমস্কার করেন। বড়দের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। তাঁর দাবি, তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং সচিনের পরিবারের মতো নিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু করেছেন।

সীমার ভারতে প্রবেশের খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছিলেন এটিএস আধিকারিকেরা। সেই তদন্ত চলাকালীন একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বলে এটিএস সূত্রে খবর। আর তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সীমাকে জেরা শুরু করেছে এটিএস।

Advertisement
আরও পড়ুন