বাঁদিকে সুখোই-৫৭, ডানদিকে এফ-৩৫। ছবি: এক্স হ্য়ান্ডল থেকে নেওয়া।
বেঙ্গালুরুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আমেরিকান যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’-এর আগমনের পরেই তৎপর হল মস্কো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ববিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ (ফেলন নামেও যা পরিচিত) নির্মাণের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে নয়াদিল্লিকে।
বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করতে আমেরিকা এবং রাশিয়া দু’টি দেশই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ফ্রান্সে তৈরি ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রাফালের পরে ভারতীয় বায়ুসেনা গত কয়েক মাস ধরেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান পেতে সক্রিয় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারত আবার পুরনো বন্ধু রাশিয়ার দ্বারস্থ হতে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে।
ঘটনাচক্রে, সোমবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সোমবার বেঙ্গালুরুতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এর উদ্বোধন করতে গিয়েও বায়ুসেনার আধুনিকীকরণের উপর জোর দিয়েছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইয়ালেহাঙ্কা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করবে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধবিমান এবং সশস্ত্র হেলিকপ্টার। এ বার সেই তালিকার প্রধান আকর্ষণ রাশিয়ায় তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘সুখোই এসইউ-৫৭’ তার ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ আমেরিকায় নির্মিত ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’।
আমেরিকায় তৈরি ‘এফ-৩৫ এবং রাশিয়ায় নির্মিত সুখোই-৫৭’র মধ্যে কোনও একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নিতে পারে বলে গত কয়েক বছর ধরেই জল্পনা রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ এ ক্ষেত্রে রুশ বিমান কেনার পক্ষপাতী। কারণ, অতীতে কখনও আমেরিকার তৈরি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান ভারতীয় সেনা ব্যবহার করেনি। অন্য দিকে, মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলটদের। তা ছাড়া, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগানের মাধ্যমে দেশের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র।
সেই মাপকাঠির নিরিখে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’-এর পাল্লা ভারী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এফ-৩৫ লাইটিং-২-এর নির্মাতা সংস্থা লকহিড মার্টিন নয়াদিল্লিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরে নারাজ বলেই সূত্রের খবর। অন্য দিকে, রাশিয়ার সুখোই সংস্থা ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ (হ্যাল)-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ বিমান উৎপাদন শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, ‘সুখোই-৫৭’র মূল নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্ট কর্পোরেশন’। তবে স্টেলথ ক্যাটেগরির দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত রুশ লড়াকু বিমান কোম্পানি ‘সুখোই’।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ‘এসইউ-৫৭’ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে রুশ বায়ুসেনা। স্টেলথ ক্যাটেগরির হওয়ায় একে রাডারে চিহ্নিত করা কঠিন। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে আকাশযুদ্ধের পাশাপাশি, মাটিতে লক্ষ্যবস্তুর উপরেও নিখুঁত ভাবে হামলা চালাতে পারে সুখোই এসইউ-৫৭। গত দু’বছরে ইউক্রেনের যুদ্ধে বার বার এই যুদ্ধবিমান তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে। এফ-৩৫ লাইটিং-২ সে ভাবে এখনও আকাশযুদ্ধে পরীক্ষিত নয় বলে বায়ুসেনার একটি সূত্রের খবর।