কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী। — ফাইল চিত্র।
পাঁচ বছরে পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। ২০১৮ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদে জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামীর শপথগ্রহণের সময় বেঙ্গালুরুতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি বিরোধী নেতাদের ‘ঐতিহাসিক সমাবেশ’। সেই সনিয়া গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়াল, অখিলেশ যাদব, সীতারাম ইয়েচুরিরা আবার বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে আলচোনায় বসতে চলেছেন সোমবার ও মঙ্গলবার। কিন্তু সেখানে নেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া প্রতিষ্ঠিত জেডিএসের কোনও নেতা! এই আবহে দেবগৌড়া-পুত্র কুমারস্বামী আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন সোমবার।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কুমারস্বামী সোমবার বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের এখনও আট-ন’মাস বাকি। এত তাড়াতাড়ি সব কিছু বলা যায় না। রাজনীতিতে অনেক কিছুই হতে পাবে। সময় এলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ সেই সঙ্গে বিরোধী নেতাদের বৈঠককে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘অনেকে স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু তা পূরণ হবে না।’’ তাঁর এই মন্তব্যকে বিজেপির সহযোগী হওয়ার বার্তা বলেন মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। জেডিএসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সমঝোতার প্রাথমিক শর্ত হিসাবে কুমারস্বামীকে কর্নাটক বিধানসভার বিরোধী দলনেতার পদ ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে বিজেপি।
বস্তুত, রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহে দেবগৌড়া-কুমারস্বামীরা বিজেপির সহযোগী হতে চলেছেন বলে গত কয়েক মাস ধরেই জল্পনা চলছে। কর্নাটকের সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটে জেডিএসের ভরাডুবির পর দু’টি ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে জেডিএস। নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন বয়কট ঘিরে বিতর্কে জেডিএস নেতা কুমারস্বামী নিশানা করেছিলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের। গত ২৮ মে সংসদ ভবন উদ্বোধন কর্মসূচিতেও যোগ দিয়েছিল জেডিএস। এর পর জুন মাসের গোড়ায় ওড়িশার বালেশ্বর করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে বিরোধীদের তরফে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর ইস্তফা দাবি করা হলেও দেবগৌড়া সরাসরি তার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বালেশ্বর দুর্ঘটনার জেরে রেলমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করা অযৌক্তিক।’’
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র ১টিতে জিতেছিল জেডিএস। পরাজিত হয়েছিলেন স্বয়ং দেবগৌড়া। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে সে রাজ্যের ২২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৯টি আসন জিতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে দেবগৌড়া-কুমারস্বামীর দল। জেডিএসের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে খারাপ ফল। এই পরিস্থিতিতে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাক্তন সহযোগী বিজেপির সঙ্গে আবার জোট বাঁধার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে কর্নাটকে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কুমারস্বামী।