কেন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হচ্ছে? কী ভাবে তা মেটানো সম্ভব? ছবি: ফ্রিপিক।
পর্যাপ্ত সূর্যালোক পাওয়া সত্ত্বেও ভারতীয়দের শরীরেই ভিটামন ডি-এর ঘাটতি বেশি হচ্ছে, এমনটাই জানাল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশই ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভোগেন। পুরুষদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে যে পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকার কথা, তা একেবারেই নেই।
কেন হচ্ছে ঘাটতি?
আইসিএমআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন দীর্ঘ দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালাচ্ছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রত্যন্ত অঞ্চল তো বটেই, শহরের অধিকাংশ মানুষের শরীরেও পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে। এর কারণ অনেক। বেশির ভাগ মানুষজনই সারা দিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কাজ করেন। গায়ে রোদ লাগে না বেশির ভাগেরই। তবে কেবল সূর্যালোক থেকেই যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মিটে যাবে তা নয়। সে জন্য দরকার সঠিক ডায়েটও। ভিটামিন ডি ভরপুর পরিমাণে আছে এমন খাবার খেতে হবে যা বেশির ভাগই খান না। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনে অনিয়মই এর অন্যতম বড় কারণ।
মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুবন্ধের পরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি হয়। তাই সে সময়ে খাওয়াদাওয়ায় বিশেষ নজর দিতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর রক্তে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়। তবে চিন্তার ব্যাপার হল, শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নন, শিশুদের শরীরেও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি হচ্ছে। ভিটামিন ডি হাড় ও পেশির গঠন মজবুত করে। এর অভাব হলে শিশুর বাড়বৃদ্ধিই তেমন ভাবে হবে না। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’ (এনসিবিআই)-এর তথ্য বলছে, যে সব শিশুর শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম, তাদেরই বেশি হাঁপানিতে ভুগতে দেখা যায়।
স্থূলতাও আরও একটা কারণ। স্থূল ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারণ মেদবহুল কোষগুলি শরীরে ভিটামিন ডি নিঃসরণে বাধা দেয়।
ঘাটতি মিটবে কী ভাবে?
ভিটামিন ডি-কে দু’ভাগে ভাগ করা হয় ভিটামিন ডি৩ ও ভিটামিন ডি২। সূর্যের আলোয় বা রোদে ভিটামিন ডি৩ আমাদের ত্বকেই তৈরি হয়। তবে এই রোদ হতে হবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টোর মধ্যে। তাই গায়ে রোদ লাগানো খুব জরুরি।
ভিটামিন ডি-র ৮০ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। বাকি ২০ শতাংশ বিভিন্ন খাবার থেকে পাওয়া যায়। যে কোনও দানাশস্যেই যথেষ্ট ভিটামিন ডি থাকে। তাই রোজের ডায়েটে ওট্স রাখা ভাল। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন ডি বেশি থাকে। তবে এখানে তো আর টুনা, কড মাছ পাওয়া যাবে না, সে ক্ষেত্রে ভেটকি, বাসা, পমফ্রেট মাছ ভাল। ছোট মাছ যেমন মৌরলায় ভিটামিন ডি আছে। ইলিশ ও লটে মাছেও প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে। ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি থাকে। দুধ ও দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারেই ভিটামিন ডি ভাল পরিমাণে থাকে। বিভিন্ন রকম বাদামেও ভিটামিন ডি থাকে।