মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটের ঘুম কি আপনার জন্য যথেষ্ট? ছবি: সংগৃহীত।
সাধারণত ৮ ঘণ্টার ঘুমের কথা বলেন চিকিৎসকেরা। সময়ের অভাবে তা ৬ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা, নামতে নামতে মিনিটখানেকে এসে থেমেছে! নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে, মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিটের ঘুমই নাকি যথেষ্ট। বিষয়টি নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর আগে সেই বার্তা দিয়েছেন আমেরিকার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জোকো উইলিঙ্ক। তাঁর পডকাস্ট এবং লেখা একাধিক বইতে তিনি ৮ মিনিটের ঘুমের বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন।
কী এই ৮ মিনিটের ঘুম?
ঘুম না বলে ইংরেজিতে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বললে বোধহয় আরও সঠিক হবে। কারণ ৮ মিনিটে যা হয়, তা ঘুম নয়। পাওয়ার ন্যাপের অর্থ হল, অল্প সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে থাকা। এর ফলে শরীরে শক্তি বাড়ে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে গেলে পাওয়ার ন্যাপের পর তা বৃদ্ধি পায়। এমনিতে গভীর ঘুমে যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। যে স্তরটিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপ’ (আরইএম স্লিপ) বলা হয়। জোকো জানাচ্ছেন, তিনি নিজের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি করে লাভবান হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আট মিনিট হল ঘুমের আদর্শ দৈর্ঘ্য। আপনি ঘুম থেকে উঠবেন বিশ্রাম নিয়ে। ক্লান্তি থাকবে না। কিন্তু এটির জন্য রয়েছে সঠিক নিয়ম।’’
৮ মিনিটের ঘুমের আগে কয়েকটি বন্দোবস্ত করা দরকার। ছবি: সংগৃহীত।
৮ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপের নির্দিষ্ট নিয়ম কী?
জোকো জানান, ৮ মিনিটের ঘুমের আগে কয়েকটি বন্দোবস্ত করা দরকার। খেয়াল রাখবেন, আপনি যেখানে শুয়েছেন, সেখানে বালিশ থাকবে অনেকগুলি, অথবা পায়ের কাছে উঁচু জায়গা থাকতে হবে। শুয়ে পড়ার পর পা দু’টিকে উপরে তুলে দিতে হবে। পা উঁচু করে রাখলে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়, যা ঘুমের গতি বাড়ায়। তার পর আট মিনিটের জন্য আপনার অ্যালার্ম সেট করতে হবে। তার পরেই ঘুমিয়ে পড়তে হবে চট করে। উঠেও পড়তে হবে চট করে। এই ঘুমকে ইংরেজিতে বলা হয়, ‘নেভি সিল ন্যাপ’।
সময়ের অভাবে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না অনেকের। ফলে সারা দিন মাথা খাটিয়ে কাজ করতে করতে এক সময়ে ক্লান্ত লাগে। মনে হয়, একটু চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিলেই বোধ হয় মাথা কাজ করবে। প্রবল ব্যস্ততার মাঝে চট করে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার যে অভ্যাস, সেটির সঙ্গে মিল রয়েছে এই তত্ত্বের।
এই ঘুমের নিয়ম হল, শুয়ে পড়ার পর পা দু’টিকে উপরে তুলে দিতে হবে। ছবি: সংগৃহীত।
চিকিৎসকেরা কী বলছেন?
বস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মেডিসিন প্রশিক্ষক এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন্স হাসপাতালের বিজ্ঞানী রেবেকা রবিন্স বলেন, ‘‘এটা যুক্তিসঙ্গত যে, অনেকেই নেভি সিলের এই পাওয়ার ন্যাপ থেকে উঠে আরও সতেজ বোধ করেন। কিন্তু এটি বিশেষ করে কার্যকরী হয় বেলার দিকে।’’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের মতে, দিনের ওই সময়ে শরীর স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি অলস এবং ক্লান্ত বোধ করে। তাই চট করে কাজের মাঝে নিরিবিলি জায়গা খুঁজে ৮-১০ মিনিটের ন্যাপ নিয়ে নিলে চাঙ্গা হয়ে যান অনেকেই।’’ কিন্তু অন্য সময়ে তেমন কার্যকরী নয় ঘুমের এই কৌশলটি।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক সিগ্রিড ভিসে বলছেন, ‘‘যদি আপনার পিঠে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা থাকে, তা হলে এই পাওয়ার ন্যাপের সময় পা উঁচু করে রাখলে পিঠের উপর চাপ পড়বে। যে কারও জন্যই দীর্ঘ সময় ধরে এই অবস্থানে ঘুমলে, উল্টে পায়ে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষতি করতে পারে।’’
লন্ডন জেনারেল প্র্যাকটিসের স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান রিদম বিষয়ক চিকিৎসক ক্যাথারিনা লেডারেল জানাচ্ছেন, লাইটের সুইঞ্চ অন করা বা বন্ধ করার মতো চোখের পলকে ঘুম আসে না। সময় লাগে। তাই ৮ মিনিটে সীমাবদ্ধ না থেকে কাজের ফাঁকে অন্তত ২০-৩০ মিনিটের বিরতি নিয়ে ঘুমোতে পারেন অনেকে। এতে ঘুমও হয়, ওঠার পর ক্লান্তিও কেটে যায়। সেটি বেশি উপকারী বলে মত চিকিৎসকের।
সারসংক্ষেপ কী?
বেলার দিকে যদি আপনার ঘুম ঘুম ভাব আসে, তা হলে নেভি সিল পাওয়ার ন্যাপ-এর নিয়ম মেনে ঘুমোতে পারেন। তা অবশ্যই উপকারী হতে পারে। তবে এই পদ্ধতি নিয়মিত রাতের ঘুমের বিকল্প হিসেবে প্রয়োগ করা যাবে না। তা ছাড়া যদি আপনার অনিদ্রার সমস্যা থাকে, তা হলে দিনের বেলা ঘুম এড়িয়ে চলা উচিত। নয়তো রাতে ঘুমোনোর সময় আর ঘুম আসবে না। পাশাপাশি, যাঁরা পিঠে ব্যথা, কোমরের ব্যথায় ভোগেন, তাঁরা পা উঁচু করে ঘুমোনোর চেষ্টা করবেন না। এতে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।