Knee Problems

মালাইচাকির সুরক্ষায়

বয়স বাড়ার সঙ্গে মালাইচাকিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কী ভাবে তা সুরক্ষিত রাখবেন?

Advertisement
ঊর্মি নাথ 
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

জন্মের পর থেকে শরীরের গঠনকাজ চলে বছর তিরিশ অবধি। তিরিশের পর থেকে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একপ্রকার থেমে থাকে গঠন বা ক্ষয়। পঁয়তাল্লিশের পর থেকে শুরু হয় ডিজেনারেশন বা ক্ষয়, চলে আমৃত্যু। এই ক্ষয় পর্বে বিকল হওয়ার সঙ্কেত দেয় হাঁটু। হাঁটাচলায় সমস্যা হয়, যন্ত্রণায় থমকে যায় স্বাভাবিক কাজকর্ম। হাঁটুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ মালাইচাকি। চাকতির মতো গোলাকার ছোট হাড়, হাত দিলে বাইরে থেকে অনুভব করা যায়। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে পাটেলা। মালাইচাকি কোয়াড্রিসেপ মাসলকে ধরে থাকে, লিগামেন্ট ও টেন্ডনগুলোকে সাপোর্ট করে, যাতে চলাফেরা, ওঠাবসা, দাঁড়ানো, সিঁড়ি ভাঙা, পা স্ট্রেচ করা, দৌড়নোর মতো কাজ ঠিক মতো হয়। মালাইচাকি বিকল হতে পারে বয়সজনিত, জন্মগত ও দুর্ঘটনার কারণে। সমস্যার উৎপত্তি যা-ই হোক না কেন, এতে হাঁটাচলার স্বাভাবিক ছন্দে ছেদ পড়ে। তবে হাঁটুর সমস্যা এক দিনে নয়, ধীরে ধীরে বাড়ে। তাই সমস্যার সঙ্কেত পেলেই ফেলে না রেখে সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সমস্যা অনেকটাই সামলে দেওয়া যায়।

Advertisement

কন্ড্রোম্যালেশিয়া পাটেলি

এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন তিরিশের কোঠায় বা তাঁর চেয়েও কমবয়সি মহিলা এবং খেলোয়াড়রা। ‘‘কন্ড্রোম্যালেশিয়ার ফলে মালাইচাকির কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির আস্তরণ রুক্ষ হয়ে যায়, ফলে ফিমারের তলার অংশে ঘষা লেগে কার্টিলেজের ক্ষতি হয়। পরিণতি ব্যথা, হাঁটু ফুলে যাওয়া, কটকটানি শব্দ অনুভূত হয়। বিভিন্ন কারণে কন্ড্রোম্যালেশিয়া শুরু হতে পারে। পাটেলার জন্মগত কিছু ত্রুটি থেকেও হতে পারে, আগেকার কোনও আঘাত লাগা থেকে হতে পারে। এর ফলে ফ্র্যাকচার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে খেলোয়াড়দের, খেলতে গিয়ে। এ ছাড়া শারীরচর্চা করতে গিয়ে অতিরিক্ত ওজন তোলা, দীর্ঘক্ষণ একই জায়গায় বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা কন্ড্রোম্যালেশিয়ার অন্যতম কারণ,’’ বললেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ। যেহেতু এই সমস্যা কমবয়সি মহিলা ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশি হয়, তাই সাময়িক ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু নিজের মতো করে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। চিকিৎসা চলাকালীন খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাঁটুর উপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। ফ্ল্যাট ফুট বা সমতল পায়ের পাতা এই সমস্যার আর একটি কারণ। তাই জুতো পরার সময় একেবারে ফ্ল্যাট-শু না পরাই ভাল।

রেকারেন্ট ডিসলোকেশন অব পাটেলা

একে চলতি বাংলায় বলা যায় মালাইচাকি ঘুরে যাওয়া। ‘‘হাঁটু ভাঁজ করার সময়ে থাই বোন আর লেগ বোন যে পোজ়িশনে থাকে তাতে পাটেলার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা থাকবে বাইরের দিকে সরে যাওয়ার। সেই প্রবণতাকে আটকায় মালাইচাকির ভিতরের দিকে একটি পেশি, যা তাকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেয় না। সেই পেশি যদি দুর্বল হয়, তা হলে মালাইচাকি ঘুরে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়,” বললেন ডা. সিংহ। এ ছাড়া কারও জন্মগত ভাবে পেশি দুর্বল থাকে। কারও পাটেলার গঠনে ত্রুটি থাকলে, যেমন স্বাভাবিকের চেয়ে পাটেলার আয়তন ছোট বা উপর-নীচে হলে মালাইচাকির স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।

অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস

পাটেলার সঙ্গে ফিমার বোনের সংযোগস্থলে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে হাঁটু ফুলে যায়, পেশির ক্ষয়ের ফলে কমজোরি হয়ে পড়ে, কার্টিলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওঠা-বসা, চলাফেলা, সিঁড়ি ভাঙতে প্রাণান্তকর অবস্থা। এ সবের বাইরে পুরনো চোট, শরীরের অতিরিক্ত ওজন এই রোগের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

নি লকিং

শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটুর উপর চাপ তৈরি হয়। শরীরের ওজন ঠিকমতো ধরে রাখতে পারে না। ফলে অসম চাপে কার্টিলেজের ক্ষয় হয়। ক্রমাগত এই ক্ষয় মেরামত করতে শরীর কার্টিলেজ তৈরি করতে পারে না, কিন্তু তার পরিবর্তে হাড় তৈরি করে। যাকে বলে অস্টিয়োফাইটিক গ্রোথ। জয়েন্টের মধ্যে এই নতুন জন্মানো হাড় চাপে ভেঙে যায় এবং নানা আকারের ভাঙা টুকরো জয়েন্টের মধ্যে ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে কোনও ভাবে একটা বড় টুকরো হাঁটুর ভাঁজ করা অবস্থায় কখনও-কখনও ফিমার ও টিবিয়ার মাঝে এসে গেলেই নি-লকিং হয়ে যায়। একে চলতি ভাষায় বলে হাঁটু আটকে যাওয়া। “এ ক্ষেত্রে পা লম্বা করে টেনে লক খোলার চেষ্টা করা যায়। কিন্তু বারবার যদি নি-লক হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে অপারেশন না করে, আর্থস্কোপি করে টুকরো হাড়গুলো পরিষ্কার করে বা ধুয়ে দেওয়া যায়। যাকে আর্থস্কোপিক লাভাজ বলে। তার পরে এই সমস্যা আর থাকে না,” বললেন ডা. সিংহ।

মালাইচাকি সার্জারি

মালাইচাকি আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে দুর্ঘটনার ফলে। ফিমার বোনে চোট লাগতে পারে, পাটেলা ভাঙতে পারে, ভিতরের কার্টিলেজ যাকে মেনিসকাস বলে সেটা আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, এ ছাড়া ভিতরের বা বাইরের লিগামেন্টে আঘাত লাগতে পারে। “দুর্ঘটনায় হাঁটুর কী অবস্থা হয়েছে, তার উপরে সার্জারি নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে একেবারে ডিসঅর্গানাইজ়ড হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে নি-রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়,” বললেন ডা. সিংহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাঁটুর সার্জারির পরে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়। এ ছাড়া হাঁটুর ব্যথায় কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়। এতে কার্টিলেজ রিজেনারেশন হয় না বটে। কিন্তু চলাফেরায় সুবিধে হয়।

    হাঁটু ভাল রাখতে সুষম আহার প্রয়োজন। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই ভাল। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ স্থূলতার ফলে ক্রমবর্ধমান ওজন হাঁটু সুস্থ রাখার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। গোটা শরীরের ওজন হাঁটু দিয়ে নীচে যাচ্ছে। তাই শরীরের ওজন যত বাড়ে, হাঁটুর উপরে তত চাপ পড়ে। ফলে হাঁটুর ক্ষতি হবে দ্রুত।

    আরও পড়ুন
    Advertisement