চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা রোজ ধূমপান করেন, তাঁদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ছবি-প্রতীকী
বিশ্বজুড়ে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু ২০২০ সালেই প্রায় ১০ লক্ষ মৃত্যু হয়েছে এই রোগের কারণে।
ধূমপানের অভ্যাসকে এখনও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বলে ধরা হয়। তা শরীরের প্রতিরোধ শক্তি অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা সিগারেট খান, তাঁদের ক্ষতি বেশি। প্রায় ৭০০০ রকম রাসায়নিক ধোঁয়ার মাধ্যমে তাঁদের শরীরে ঢোকে। তার মধ্যে থাকে বেনজিন এবং অ্যালডিহাইডস। এই দু’টি পদার্থই ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
সমীক্ষা বলছে, গোটা বিশ্বের ৭৫-৮০ শতাংশ ক্যানসারে মৃত্যুর কারণ হল ধূমপান। তার উপর যদি ক্যানসারের চিকিৎসা চলাকালীন ধূমপান করেন কেউ, তবে তা আরও ক্ষতিকর। কারণ, কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপির সময়ে তামাক বেশি ক্ষতি করতে পারে। ফলে এ কথা প্রতিষ্ঠিত যে ধূমপানের কারণে অসুস্থতার আশঙ্কা বাড়ে।
চিকিৎসকদের মতে, যাঁরা রোজ ধূমপান করেন, তাঁদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। যে সকল ধূমপায়ী একটি সময়ে গিয়ে সেই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন, তাঁদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমতে থাকে।
তবে যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের যে ক্যানসার হবে না, এমন নয়। অন্যরা ধূমপান করার সময়ে সেখানে নিয়মিত উপস্থিত থাকলে ক্ষতি হয়। পাশাপাশি ক্ষতির কারণ হতে পারে বায়ুদূষণও। দূষিত বায়ুতে নানা ধরনের ধূলিকণা থাকে, তা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। কারখানা ও বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির অংশ থেকে যায় হাওয়ায়। তা শ্বাসের সঙ্গে গিয়ে ঢোকে শরীরে। এরই পাশাপাশি থাকে কাঠের উনুন জ্বালানো কিংবা গাছ পোড়ানোর জেরে তৈরি হওয়া দূষণ। সবের মধ্যে বেশি ক্ষতি করে গাড়ির ধোঁয়া। তাতে অ্যাসিড, মাটি, রাসায়নিক পদার্থের কণা বেশি থাকে। এ সব যেহেতু খুবই ছোট হয়, ফলে আলাদা করে দেখতে পাওয়া যায় না। ২০১৮ সালে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (হু) দেখিয়েছিল, বায়ুর সঙ্গে মিশে থাকা এ সব দূষিত পদার্থ প্রতি বছর বহু জনের ক্যানসারের কারণ হয়ে ওঠে। কয়েক বছর আগে চিনে এক আট বছরের শিশু ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কোনও ভাবে তা ধূমপান থেকে হয়নি বলে দেখা যায়। এমন ভাবেই বায়ুদূষণের জেরে ফুসফুসের ক্যানসার বাড়ছে। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। ‘হু’-এর রিপোর্ট বলছে, ডায়াবিট কিংবা হার্টের রোগ যাঁদের আছে, তাঁদের মধ্যে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি দেখা যাচ্ছে। আর আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা নিয়মিত বাইরে কাজ করেন কিংবা খোলা জায়গায় শরীরচর্চা করে থাকেন।
ফলে প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখলেই সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালের বক্ষরোগ চিকিৎসক শিবরেশ্মি উনিত্থন বলেন, ‘‘খেয়াল রাখা জরুরি যে, ক্যানসার যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, ততই সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি।’’ ফুসফুসের ক্যানসারে প্রথম দিকে বিশেষ কোনও উপসর্গ দেখা না গেলেও কয়েক দিনের মধ্যেই, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, মাথা ব্যথা হতে শুরু করে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। এমন বেশি দিন চলতে থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলেই তাঁর মত।