কেন অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার বাড়ছে, কী দেখে সাবধান হবেন? ফাইল চিত্র।
সব ধরনের ক্যানসারের তুলনায় অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার অনেকটাই বেশি। কারণ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার চিহ্নিত করতে অনেকটাই সময় লেগে যায়। গোড়ায় উপসর্গ দেখে অনেক সময়েই বোঝা যায় না যে ক্যানসার বাসা বাঁধতে শুরু করেছে অগ্ন্যাশয়ে। সাম্প্রতিক সময়ের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। গত ৫ থেকে ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ধূমপান ও লাগামছাড়া মদ্যপান ক্যানসার হওয়ার অন্যতম বড় কারণ।
প্রত্যন্ত এলাকাগুলির থেকে শহরাঞ্চলেই ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, এমনটাই জানিয়েছেন কোচির অমৃতা হাসপাতালের চিকিৎসক পুনিত ধর। সমীক্ষায় তিনিও রয়েছেন। চিকিৎসকের বক্তব্য, পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যেই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। কর্কট রোগ কার শরীরে বাসা বাঁধবে, তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। তবে রোজের কিছু অভ্যাস অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান করলে এই রোগের ঝুকি বাড়ে। যাঁদের ওজন বেশি, উচ্চ কোলেস্টেরল ও টাইপ-২ ডায়াবিটিসে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার প্রাথমিক পর্বে বোঝা খুব কঠিন। হালকা জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দেয়, এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হবে। কিছু খাওয়ার পরেই যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। রাতে ঘুমের মধ্যেও পেটে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা হবে। সেই সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া, খিদে কম, সারা ক্ষণ বমি বমি ভাব থাকবে। জন্ডিস হলে কেউই প্রাথমিক ভাবে ক্যানসারের পরীক্ষা করান না। ফলে চট করে এই রোগ ধরা যায় না। ধীরে ধীরে অগ্ন্যাশয় থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে যকৃত ও ফুসফুসে।
ঘন ঘন বদহজম, অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হলেও তা কিন্তু ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ দু’ধরনের হতে পারে। একটি হল হঠাৎ প্রদাহ বা অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস। দ্বিতীয়টি হল ধীরগতির প্রদাহ বা ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। সাধারণত পিত্তথলিতে পাথর হলে প্যানক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণ দেখা যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তা হতে পারে। এ ছাড়াও দেহে লিপিড বা ক্যালশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে এই রোগ হতে পারে। খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কারণ হতে পারে। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস হলে পেটে তীব্র যন্ত্রণা হয়। পেটের উপর থেকে শুরু হওয়া এই যন্ত্রণা ক্রমশ গোটা পেট-সহ পিঠের শিরদাঁড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বুকের দিকেও এই ব্যথা উঠতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমিও হয়ে থাকে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে। আলট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান করালে ক্যানসার ধরা পড়তে পারে।