ওট্সের দুধ খাচ্ছেন। তা কতটা উপকারী? ছবি:ফ্রিপিক।
বছর ৩০-৩৫ পিছিয়ে গেলেই দেখা যাবে, দুধ নিয়ে জনমানসে ভাবনা ছিল ভিন্ন। পরিবারের খুদে সদস্যটি তো দুধ খেয়েই বড় হবে। তাই ভোর হতে না হতেই বাবা-কাকারা ছুটতেন খাটালে, খাঁটি দুধ আনতে। ঘন দুধের জন্য গোয়ালাদের দরবারে হত্যে দিতেন পরিবারের লোকেরা। তবে এখন সে দিন নেই। দুধ এখন প্যাকেটজাত। তার চেয়েও বড় কথা, গরুর দুধ নয়, ইদানীং স্বাস্থ্যসচেতন মানুষজন মন দিয়েছেন উদ্ভিজ্জ দুধে।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, উদ্ভিজ্জ দুধের বাজার বেড়েছে। তার কারণ, অনেকে মনে করেন এই দুধে ফ্যাট কম, পুষ্টিগুণ যথেষ্ট। তাই ওজন বশে রাখা থেকে ফিট থাকার জন্য এটাই বিকল্প। নয়া ট্রেন্ড বলছে, আগামী দিনে উদ্ভিজ্জ দুধের চাহিদা বিশ্ববাজারে হু-হু করে বাড়বে। ২০২৩ সালে যে ব্যবসার পরিমাণ ৩.৩২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, তা ২০৩৩ সালে অন্তত ১০ শতাংশ বাড়বে।
ভারতেও ২০২৪ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, ৭৪ শতাংশ মানুষ বিকল্প দুধের দিকে ঝুঁকছেন। তার কারণও আছে। ল্যাকটোজ় হজমের ক্ষমতা কম হলে গরুর দুধ খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওট্স, সয়া, কাঠবাদামের দুধ বিকল্প হতে পারে ।
কিন্তু সত্যি কি ওট্সের দুধ গরুর দুধের মতো পুষ্টিকর? ‘লাভ ইউ, বাই’ নামে একটি পডকাস্টে সমাজমাধ্যম প্রভাবী ম্যাকি ম্যাকম্যানেস প্রশ্ন তোলেন এ নিয়ে। সেখানে ফরাসি জৈব-রসায়নবিদ, জেসি ইনচাসপে বলছেন, ‘‘এটি হল স্টার্চ । ওট্স এক প্রকার দানাশস্য। যা আসলে স্টার্চ বা শ্বেতসার। সুতরাং ওট্সের দুধ খাওয়া আর স্টার্চ খাওয়া একই।’’
সম্প্রতি ওট্স দুধ নিয়ে ইউনিভার্সিটি অফ কোপেনহাগেনে একটি গবেষণা হয়। গবেষক মারিন নিসেন লান্ডের কথায়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে ওট্সের দুধে গরুর দুধে্র চেয়ে প্রোটিনের মাত্রা কম। এতে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডও তুলনায় কম পাওয়া যায়। মারিন বলছেন,‘‘ উদ্ভিজ্জ দুধ অবশ্যই খাওয়া ভাল। তবে পুষ্টিগুণের বিচারে গরুর দুধ এগিয়ে থাকবে।’’
ওট্সের দুধ কি নিয়মিত খাওয়া যায়? মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ কল্যাণী মানেকরের কথায়, এর কোনও সহজ উত্তর নেই। কারণ, প্রতিটি মানুষের জীবনধারা আলাদা, পুষ্টির প্রয়োজন, খাদ্যাভ্যাস পৃথক। সেই বিষয়গুলিও এর সঙ্গে জড়িত। তবে, কারও ল্যাকটোজ় ইনটলারেন্ট (গরুর দুধে থাকা ল্যাকটোজ় হজমে সমস্যা থাকলে) হলে তিনি ওট্সের দুধ অবশ্যই খেতে পারেন। ওট্সের দুধের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের বাদাম মিশিয়ে শরীরচর্চার পরে খাওয়া যেতে পারে।
মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক পুষ্টিবিদ রুতু ধোদাপকর বলছেন, ওট্সের দুধে ৬০ শতাংশ স্টার্চ, ১৪ শতাংশ প্রোটিন, ৭ শতাংশ লিপিড, ৪ শতাংশ বিটা-গ্লুকন থাকে। এতে কোলেস্টরল, ট্রান্স ফ্যাট কম থাকে। ফ্যাটের পরিমাণও কম। ভিটামিন ডি এবং বি১২-এর উৎস হিসাবে এটি উপকারী।