কমবয়সিরা প্রায়ই এই ধরনের ডায়েট করে থাকেন, সতর্ক করলেন মৌনী। ফাইল চিত্র।
মৌনী রায়ের ফিটনেস সত্যিই ঈর্ষণীয়। অনুরাগীদের মধ্যে চর্চা হয় তাঁর শরীরের গড়ন নিয়েও। কী খেলে বা কী ভাবে শরীরচর্চা করলে শরীরের গড়ন মৌনীর মতো হবে সেই আকাঙ্ক্ষা অনেক মহিলারই আছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মৌনী জানিয়েছেন, বিশেষ একটি ডায়েট করে একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পেটে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক বিছানা থেকেই উঠতে পারেননি। পরে আবার খাওয়াদাওয়ার ধরন বদলে ফেলেন।
মৌনীর কথায়, তিনি কিটো ডায়েট অনুসরণ করছিলেন দীর্ঘ সময় ধরেই। আর তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিনেত্রীর কথায়, “বাঙালি হয়েও ভাত খেতাম না। ডায়েট নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করার অভ্যাস ছিল। একবার নিজে থেকেই কিটো ডায়েট করতে শুরু করলাম। তার পরেই অসুস্থ হই। অন্ত্রে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।”
কিটো ডায়েটে কি সত্যিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?
মৌনী শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালেন ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নরেন্দ্র সিংলা। তিনি জানান, মাঝে ওজন খুব বেড়েছিল মৌনীর। সেই সময়ে তিনি তাঁর ডায়েট থেকে কার্বোহাইড্রেট একেবারেই বাদ দিয়ে দেন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন শুধু ডিটক্স পানীয় খেয়েও থেকেছেন। এরই ফলে তাঁর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হয়। অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। ফলে অন্ত্রে সংক্রমণ হয়ে যায়।
কিটো ডায়েট একটানা অনুসরণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর ব্যাখ্যা, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলে শরীর যে বিশেষ মেটাবলিক পর্যায়ে চলে যায় তাকে বলে কিটোসিস। তাই এই ডায়েটের নাম কিটো ডায়েট। কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তির জোগান দেয়। তাই একেবারেই খাওয়া বন্ধ করে দিলে শরীর তখন বিকল্প উপায় হিসেবে কিটোনিনের উৎপাদন শুরু করে দেয়। বিকল্প পথে বিপাকক্রিয়া যথাযথ না হওয়ায়, অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট হতে শুরু করে। এই ব্যাক্টেরিয়াই হজম প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা নেয় এবং শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ ছেঁকে বার করতে সাহায্য করে। এদের সংখ্যা হ্রাস হলেই তখন পাকস্থলী, অন্ত্রে টক্সিন জমতে শুরু করবে। ফলে সংক্রমণ দেখা দেবে।
সকলের শরীর সমান নয়। তাই কিটো ডায়েট চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদি কিটো করলে পেশিতে টান, নানা ধরনের পেটের রোগ, আলসার, কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের ঋতুস্রাবও অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। তাই সুষম ডায়েট করে অর্থাৎ ঘড়ি ধরে বারে বারে পরিমিত পরিমাণে খেয়ে এবং খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন ও ফ্যাট সম পরিমাণে রেখেই ওজন কমানো উচিত বলেই মনে করছেন চিকিৎসক।