মন্দিরা বেদী। ছবি : সংগৃহীত।
মিষ্টি দেখলে মন কেমন করে না কার! বিশেষ করে শীতের মরসুমে তো চার পাশে মরসুমি মিষ্টির ছড়াছড়ি। কোথাও মিষ্টির দোকানের শো-কেসে খোয়া ক্ষীর আর মাওয়ায় মাখামাখি গাজরের হালুয়া, তো কোথাও ঝাঁকা ভর্তি জয়নগরের মোয়া। এদিক ওদিক নজর সরিয়েছেন কি চোখে পড়বে নাগড়ি ভরা নলেন গুড়, গুড়ের কাঁচাগোল্লা-রসগোল্লা, প্লাম কিংবা ফ্রুট কেক, পৌষ সংক্রান্তির পিঠে-পায়েস— মিষ্টি ছাড়ব বললেই ছাড়া যায় নাকি! বিশেষ করে মিষ্টি দেখলেই যাঁরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য, চোখে ঠুলি বাঁধা ঘোঁড়ার মতো একই লক্ষ্যে ছুটে যান, তাঁরা কী করবেন? মিষ্টি খারাপ, চিনি খারাপ জেনেও তো তাঁরা পায়ে শিকল বাঁধতে পারছেন না। এঁদের অনুপ্রেরণা হতে পারেন মন্দিরা বেদী। ৫২ বছর বয়সি অভিনেত্রী ফিটনেসের ব্যাপারে বরাবর ‘সিরিয়াস’। তবে মিষ্টি তাঁরও প্রিয় জিনিস। সেই মন্দিরা বছর কয়েক হল চিনি আছে এমন সমস্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করেছেন। প্রশ্ন করা হলে বলেছেন, ‘‘সামনে অনেকটা জীবন পড়ে আছে। ভাল ভাবে বাঁচতে হবে তো!’’
অভিনেত্রী থেকে নিউজ় অ্যাঙ্কর হয়ে ক্রিকেট প্রেজ়েন্টার হওয়া মন্দিরা এখন ফ্যাশন ডিজ়াইনার। নিজস্ব শাড়ির ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন তিনি। কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি নজর রাখেন স্বাস্থ্যেও। নিয়ম করে সপ্তাহে দু’বার হাঁটতে যান। সেই হাঁটাহাঁটি চলে অন্তত ঘণ্টা দেড়েক। সপ্তাহের বাকি দিন গুলোর কোনও দিন জিমে গিয়ে ঘাম ঝড়ান, কোনও দিন যোগব্যায়াম করেন অথবা কোনও দিন কায়িক শ্রম আছে, এমন কাজ করেন ঘণ্টা খানেক সময় নিয়ে। নিজের ওই রুটিনের কথা সম্প্রতি একটি পডকাস্টে বলেছেন মন্দিরা। এ-ও বলছেন, ‘‘জিম বা হাঁটাহাঁটি নিয়ম মেনে করতে হলে একঘেঁয়েমি আসবেই, তাই আমি কোনওটাই এক ভাবে করি না। ফলে আমার শরীরচর্চার রুটিনও বন্ধ হয় না।’’ পঞ্চাশের কোঠা পেরিয়েও নিজেকে কী ভাবে ফিট রেখেছেন অভিনেত্রী, তা-ই জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে। সে প্রসঙ্গেই মন্দিরা বলেছেন তাঁর বিশেষ খাওয়া দাওয়ার কথাও। জানিয়েছেন, বছর খানেক হল চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি সবরকম খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
মিষ্টির ভক্ত মন্দিরা। তাই কাজটা যে সহজ ছিল না, তা মেনেছেন তিনিও। তবে সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছেন, মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে তিনি কী খান। মন্দিরা বলেছেন, ‘‘মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে ফল খাই। খেজুরও খাই। যদি কোনও মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছেই হয় তবে চিনির বদলে খেজুর দিয়ে সেই মিষ্টি বানিয়ে নিই। চিনিকে জীবন থেকে পুরোপুরি বিদায় দিয়েছি। আর আমার মতে সেটা ভাল অভ্যাস। মোটেই খারাপ কিছু না। আর তা ছাড়া ওই অভ্যাসটা ধীরে ধীরে আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। মিষ্টি খেতে ভালবাসি ঠিকই, কিন্তু মিষ্টি এখন আর মিস করি না।’’
প্রক্রিয়াজাত চিনিকে জীবন থেকে পুরোপুরি বিদায় জানানো যে কঠিন, তা বলছেন পুষ্টিবিদ গরিমা গয়ালও। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, যদি কেউ সেটা করে ফেলতে পারে, তবে তার উপকার অসীম। গরিমা বলছেন, ‘‘চিনি বা চিনি আছে এমন পানীয় এবং খাবার খেলে তার নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীরে। বেশি চিনি শরীরে গেলে স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, দাঁতের সমস্যা-সহ নানা শারীরিক অসুস্থতা বাসা বাঁধতে পারে। এ ছাড়াও বেশি পরিমাণে চিনি ত্বকের ক্ষতি করার পাশাপাশি আমাদের ক্লান্তিবোধ বাড়িয়ে তোলে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বহু গবেষণায়। চিনি খাওয়া ছাড়লে, এই সমস্ত ঝুঁকিকে বিদায় জানানো সম্ভব হবে।’’