সাধারণত রক্তে ‘অ্যান্টি হিমোফিলিক গ্লোবিউলিন’ না থাকলে মানুষ হিমোফিলিয়ার শিকার হন। ছবি: শাটারস্টক
শরীরে কোথাও কেটে গেল, কিছু ক্ষণ পর ওই কাটা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ১ থেকে ১২ ফ্যাক্টর প্রোটিন কাজ করে। এ ছাড়াও আরও অনেক প্রোটিন আছে। শরীরে এই সব প্রোটিনের অভাব হলে রক্তক্ষরণের রোগ হতে পারে। যাকে বলে ‘ব্লিডিং ডিজ়অর্ডার’।
এই অসুখে আক্রান্তদের শরীরে কোথাও কেটে গেল কিছু ক্ষণ পর ক্ষত জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধে না, রক্তক্ষরণ হতেই থাকে। সাধারণত রক্তে ‘অ্যান্টি হিমোফিলিক গ্লোবিউলিন’ না থাকলে মানুষ হিমোফিলিয়ার শিকার হন। একে ‘এএইচজি’ বা ‘ফ্যাক্টর ৮’-ও বলে। আবার ফ্যাক্টর ৯-এর অভাবেও হিমোফিলিয়া হয়। তবে এই রোগ মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী ফ্যাক্টর ৮-এর অভাব (হিমোফিলিয়া)। মাত্র ১৫ শতাংশের কাছাকাছি ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর ৯-এর অভাবে এই রোগ হতে পারে (হিমোফিলিয়া বি)।
এটি মূলত জিনবাহিত রোগ। সব মানুষের মধ্যেই এক্স ক্রোমোজোম থাকে। মেয়েদের মধ্যে থাকে দুটো এক্স ক্রোমোজোম। আর ছেলেদের থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজোম। এক্স ক্রোমোজোম রোগের ত্রুটিযুক্ত জিনের ফলে হিমোফিলিয়া হয়। কোনও ছেলে যদি বংশগত ভাবে এই ত্রুটিযুক্ত জিন পায়, তা হলে তার হিমোফিলিয়া হবে। মেয়েদের মধ্যে এই রোগ খুব একটা দেখা যায় না। তবে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েরাও এই রোগের বাহক হতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এক্স ক্রোমোজোমে এই ত্রুটিপূর্ণ জিন থাকলে সে ‘হিমোফিলিয়া ক্যারিয়ার’ বা বাহক হবে। পরে তার পুত্রসন্তান হলে সে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হবে। যদি কন্যাসন্তান হয়, তা হলে সে হবে বাহক। তাই একে বলা হয় ‘এক্স লিঙ্কড ডিসঅর্ডার’।
হিমোফিলিয়ার লক্ষণ
কেটে গেলে রক্ত বন্ধ না হওয়া, পড়ে গিয়ে পেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, মাথায় আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যাওয়া, ফোলা ভাব কমতে সময় নেওয়া— এ সবই হিমোফিলিয়ার লক্ষণ। এ ছাড়া মল, মূত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, মাঝেমাঝে নাক থেকে রক্তপাত, মাড়ি থেকে রক্তপাত, কিংবা সঙ্গমের সময়ও যদি অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, সতর্ক হন। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে এক জন অভিজ্ঞ হেমাটোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।