কোমরের ব্যথায় আরাম মিলবে চক্রবাকাসন অভ্যাস করলে। চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
একটানা চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। ফলে ঘাড়, পিঠ, কোমরে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। দীর্ঘ দিন ধরে এই ধরনের সমস্যা থাকলে তা অস্থিসন্ধি কিংবা পেশির নমনীয়তা নষ্ট করে। কোমর, পিঠ থেকে সেই ব্যথা কখনও কখনও ঘাড় পর্যন্তও পৌঁছয়।
অনেকেই ব্যথা কমানোর জন্য গরম সেঁক, মলম কিংবা ওষুধের শরণ নেন। তবে তার কাজ সাময়িক। যোগ প্রশিক্ষকেরা বলছেন, নিয়মিত চক্রবাকাসন অভ্যাস করলে এমন অনেক ব্যথারই উপশম হয়ে যেতে পারে।
সংস্কৃত শব্দ ‘চক্রবাক’ থেকেই এই ব্যায়ামের নাম হয়েছে চক্রবাকাসন। ইংরেজিতে যা ‘রাডি গুজ় পোজ়’ নামেও পরিচিত। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, ভঙ্গিটি কেমন হতে পারে। গোটা শরীরের ভঙ্গিটি দেখতে হবে অনেকটা ‘রাডি গুজ়’ কিংবা অনেকটা রাজহাঁসের মতো।
কী ভাবে করবেন?
· প্রথমে হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে ম্যাটের উপর বসুন। ইংরেজিতে যাকে ‘টেবিল টপ পোজ়’ বলা হয়।
· গোটা শরীরের ভার থাকবে হাতের তালু এবং হাঁটুর উপর।
· ঊরু থেকে পায়ের নীচের অংশ লক্ষ করলে দেখবেন, তা অনেকটা উল্টো ইংরেজি ‘এল’ অক্ষরের মতো হবে।
· শ্বাস-প্রশ্বাস একেবারে স্বাভাবিক থাকবে। চোখ থাকবে মাটির দিকে।
· এ বার দু’টি হাত সোজা রেখে হাঁটু ভাঁজ করে গোড়ালির উপর বসুন। গ্রীবা থাকবে টান টান, মাথা মাটিতে ঠেকে থাকবে। দুই হাঁটু প্রায় বুকের কাছাকাছি কোনও জায়গায় গিয়ে ঠেকবে।
· এই অবস্থানে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। আবার প্রথম অবস্থানে ফিরে যান।
· এক বার বসে তার পর আবার উঠলে একটি রাউন্ড সম্পূর্ণ হবে। এই ভাবে অন্তত বার পাঁচেক চক্রবাকাসন অভ্যাস করা যায়।
· তবে এই আসন করার সময়ে বিশেষ নজর দিতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর।
· শ্বাস নিতে নিতে হামাগুড়ি, অর্থাৎ ‘টেবিল টপ পোজ়’ ভঙ্গি থেকে হাত, পিঠ, কোমর টেনে পায়ের উপর বসতে হবে। পিঠ, কোমর, নিতম্বের অবস্থান দেখলে ‘রাডি গুজ়’ বা রাজহাঁসের মতো মনে হবে।
· আবার, ‘রাডি গুজ়’ পোজ় থেকে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ‘টেবিল টপ’, অর্থাৎ হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে ফিরে যেতে হবে।
কেন এই ব্যায়াম করবেন?
১) বিচলিত মন শান্ত করে।
২) রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।
৩) মেরুদণ্ড সচল এবং স্বাভাবিক থাকে।
৪) ঘাড়, কাঁধ, পিঠ এবং কোমরের পেশির নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
৫) শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে অঙ্গ সঞ্চালনার সংযোগ তৈরি হয়।
সতর্কতা:
ঘাড়ে, পিঠে বা শিরদাঁড়ায় কোনও আঘাত বা চোট থাকলে এই আসন না করাই ভাল। হাঁটুতে ব্যথা থাকলে বেশি ক্ষণ ‘টেবিল টপ’ ভঙ্গিতে থাকতে পারবেন না। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে। ভার্টিগো, স্পন্ডিলোসিস কিংবা স্পন্ডিলাইটিসের মতো রোগ থাকলেও সাবধান থাকা উচিত।