One Meal a Day

কতটা স্বাস্থ্যসম্মত ‘ওয়ান মিল আ ডে’?

ভারী খাবার দিনে মাত্র একবার... ওজন কমাতে এই ডায়েট কতটা উপকারী?

Advertisement
সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৯:০১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গালভরা নাম, চটজলদি পরিণাম... এতে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই ওজন কমাতে বেছে নেন নানা রকম ডায়েট প্ল্যান। বিশেষ করে বিনোদন দুনিয়া বা গ্ল্যামার-জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কম সময়ে ওজন কমাতে জিমের পাশাপাশি ওম্যাড (ওয়ান মিল আ ডে) বা ওয়ারিয়র ডায়েটের দিকে ঝোঁকেন অনেক সময়ে। এর কিছু সুফল অবশ্যই হাতেনাতে মেলে। তবে এর অন্যান্য প্রভাব, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান কি না, আদৌ সেই ব্যক্তিবিশেষের জন্য উপযোগী কি না... এ সব কিছু মাথায় রেখেই এ ধরনের ডায়েট শুরু করা ভাল। সম্প্রতি দিনে একবার খাওয়ার ডায়েট চার্ট নিয়ে কথা বলেছেন বিনোদন দুনিয়ার কিছু মানুষ। তার পরেই সমাজমাধ্যমেও এই ডায়েট অনুসরণ করার প্রবণতা নিয়ে চর্চা বেড়েছে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়েরই একটা ধরন হল ওয়ান মিল আ ডে, যেখানে টানা ১৮-২২ ঘণ্টা ভারী খাবার না খেয়ে দিনে মাত্র একবার সম্পূর্ণ মিল খাওয়া হয়। এই ডায়েট আদৌ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা অনুসরণযোগ্য, কী কী মাথায় রাখতে হবে, সে সব বিশদে জেনে নেওয়া দরকার।

Advertisement

দিনে একবার খেলেই চলবে?

ওয়ান মিল আ ডে অর্থাৎ দিনে একবার সম্পূর্ণ আহার করলে বাকি দিন কতটা ও কী খাবেন, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদ কোয়েল পালচৌধুরী এ বিষয়ে বললেন, ‘‘অনেকেই ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ না নিয়েই এই ডায়েট শুরু করে দেন। এটা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ধরনের ডায়েট প্ল্যান চটজলদি কিছু সুফল দিচ্ছে। কিন্তু তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন থাকা প্রয়োজন।’’ এর পাশাপাশি ডায়েট মেনে চলার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া, ক্যালরি হিসেব করে খাওয়া ও ব্যায়াম করার উপরেও জোর দিলেন কোয়েল।

ওম্যাড যখন মুশকিল আসান

চটজলদি সুফল বলতে শরীরে মেদবৃদ্ধি হতে না দেওয়া, রক্তে গ্লুকোজ়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা, ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি ভাল হওয়ার মতো কিছু ইতিবাচক দিক অবশ্যই রয়েছে এই ধরনের ডায়েটের। কারও দ্রুত ওজন কমানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেই সাধারণত এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার কথা ভাবা হয়। কিন্তু এর প্রভাব শরীরের অন্যত্র দেখা দেবেই। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট হিনা নাফিস তাই বলছেন, ‘‘এই ধরনের ডায়েট সাময়িক ভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে। কখনওই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হতে পারে না। কারণ কম ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করতে করতে এক সময়ে শরীর তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তার পরে আর আলাদা করে ওজন কমবে না। পুষ্টির ঘাটতি হচ্ছে কি না, এ ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রে তা খেয়াল রাখা উচিত সতর্ক ভাবে।’’ মাসের পর মাস যে এই ডায়েট চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তার সহজ উদাহরণ হিসেবে হিনা বললেন রো‌জা রাখার কথা। কারণ সেটিও এক ধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। ‘‘রমজানের মেয়াদ এক মাস। অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদি সময়ের ডায়েট। কেউ যদি সারা বছর ধরে সেই একই নিয়মে খাওয়াদাওয়া করতে চান, তা যুক্তিযুক্ত হবে না।’’

ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া

দিনে একবার সম্পূর্ণ মিল খেলে তা যেন অবশ্যই ব্যালান্সড ডায়েট হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। না হলে শরীরে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টসের ঘাটতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তা থেকে যে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দেখা যেতে পারে, তা হল—

  • বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণা বলছে, এই ধরনের উপবাসের প্রবণতা হৃদ্‌রোগের সমস্যাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • এক ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত শরীরে হঠাৎ বদল এলে তা থেকে হজমক্ষমতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকার ফলে হতে পারে গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যাও।
  • দীর্ঘ বিরতির পরে একবার বেশি করে খেলে অনেক সময়েই অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায়। অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁকও তৈরি হয়। অনেকে দীর্ঘ উপোসের পরে ময়দার তৈরি খাবার খান। এ ধরনের অভ্যেসে আখেরে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
  • দীর্ঘ দিন ধরে ওয়ান মিল ডায়েট অনুসরণ করলে প্রেশার, সুগার ফল করা কিংবা কিডনি স্টোন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। শরীর ও মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। ফলে ত্বক, চুল, মানসিক স্বাস্থ্য সব কিছুর উপরেই প্রভাব পড়ে।

মাথায় রাখুন

সকলের জন্য সব ডায়েট নয়— এই মূল কথাটি মেনে চলতে হবে। যেমন ডায়াবেটিকদের জন্য ওম্যাড ডায়েট একেবারেই অনুসরণযোগ্য নয়। দিনে একবার খাওয়ার ডায়েট অনুসরণ করলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ব্যালান্সড মিল তৈরি করে নিন। দিনের বাকি সময়ে কী খেতে পারেন, জেনে নিন তা-ও। কায়িক পরিশ্রম করেন, এমন অনেক মানুষই দিনে একবার অনেকটা ভাত খেয়ে বাকি দিন চিড়ে-মুড়ি-ছাতু খেয়ে কাটান। প্রয়োজনীয় ক্যালরির জোগান বজায় থাকে তাতে। অনেক অভিনেতা বা মডেলরা দিনে একবার ভারী খাবার খেয়ে বাকি দিনটা ফল, জুস ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। কাজেই শরীরের চাহিদা ও কাজের ধরন অনুযায়ী ওয়ান মিল ডায়েটের সংজ্ঞাও বদলাতে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড মেনে নয়, ওম্যাড বা যে কোনও ক্র্যাশ ডায়েট শুরু করার আগে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই কাম্য।


আরও পড়ুন
Advertisement