বহু ডেঙ্গিরোগীর শুশ্রূষা চলছে বাড়িতে। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম নয়। রোগীমৃত্যুর খবরও উঠে আসছে। তার মধ্যেই আবার বহু ডেঙ্গিরোগীর শুশ্রূষা চলছে বাড়িতে।
বাড়িতেও পর্যাপ্ত যত্ন সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে ডেঙ্গিরোগীকে। তবে বাড়িতে রোগীর যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু তথ্য জেনে রাখা জরুরি। আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কেউ যদি বাড়িতেই থাকেন, তা হলে কেমন হবে রোগীর বিশেষ যত্ন।
প্রবল জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা— ডেঙ্গির এই লক্ষণগুলি দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ এই সময়ে খাওয়ানো যাবে না। একই কথা বলছেন চিকিৎসক অদ্রিজা রহমান মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর মতে, এখন ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়া এবং কোভিডও হচ্ছে। তাই নিজেদের সিদ্ধান্তে কোনও ওষুধ এখন না খাওয়াই ভাল। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীর শরীরে ঠান্ডা জল দিয়ে স্পঞ্জ করা যেতে পারে। তাতে খানিকটা উপকার পাওয়া যাবে।
সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ডেঙ্গি হলে রোগীর শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিতে পারে। কারণ এই সময় শরীর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ফ্লুইড নির্গত হয়। ফলে শরীর নিজস্ব আর্দ্রতা হারাতে থাকে। এমনটা হচ্ছে কি না, তা বোঝা যায় কিছু লক্ষণ দেখে। যেমন—
১) প্রস্রাব কম হওয়া।
২) জিভ, ঠোঁট এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
৩) হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
৪) হাতের আঙুল এবং গোড়ালি ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
এমন কোনও একটি লক্ষণ দেখা দিলে কী করতে হবে? উপায় বলে দিয়েছেন চিকিৎসক। অদ্রিজা বলছেন, ‘‘এই ধরনের লক্ষণগুলি দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে। জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হব। গলাব্যথা থাকলে জল হালকা গরম করে নিয়ে খাওয়াই ভাল। উপকার পাবেন। তবে জল খাওয়া কমিয়ে দিলে কোনও মতেই চলবে না।’’
ডেঙ্গি ছোঁয়াচে নয়। বাড়িতে কারও হয়েছে মানেই অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়বে, এমন কোনও আশঙ্কা নেই। তবে রোগীকে যেন মশা না কামড়ায়, সে দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আক্রান্তকে কামড়ানো মশা অন্য কাউকে কামড়ালে তখন ডেঙ্গি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, রোগীকে সব সময়ে মশারির ভিতর রাখা জরুরি। ওই নির্দেশিকাতেও একই কথা বলা হয়েছে। বাড়ির কোথাও জল জমতে দেওয়া যাবে না। দরজা-জানলা সব সময়ে বন্ধ করে রাখতে হবে। রোগীকে সারা ক্ষণ বিশ্রামে থাকতে হবে। ভারী কোনও কাজ করা যাবে না। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়ির খাবার খাওয়াই শ্রেয়।
ডেঙ্গিকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। নির্দেশিকা অনুসারে, তলপেটে ব্যথা, ত্বকে লাল লাল র্যাশ, মাড়ি থেকে রক্তপাত, বমি এবং মলের সঙ্গে রক্ত বেরোনো, সারা ক্ষণ দুর্বল লাগা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া— এই লক্ষণগুলি দেখলে রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি।