Balancing Menopause

রজোনিবৃত্তির সঙ্গে পেশাগত ক্ষেত্রের সংঘাত? কী ভাবে সামলাবেন?

দেশের বিভিন্ন শহরে চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারা তাঁদের রজোনিবৃত্তির পর্যায়ে এসে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন অহরহ। সঙ্কোচের কারণে তা মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না অনেকে। ফলে কর্মক্ষেত্রেও নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৩৫
Health tips for women to understand and manage menopause symptoms while balancing work and personal lives

রজোনিবৃত্তি পর্বে কী ভাবে ভাল থাকা যায়, পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা। ছবি: ফ্রিপিক।

রজোনিবৃত্তির পর্যায়টা সহজ নয়। এক দিকে যেমন শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, তেমনই বদলে যায় মনমেজাজ। সংসার, কাজকর্ম, ছেলেমেয়ের অজস্র ঝড়ঝাপটা সামলে জীবনের মধ্যপর্বে এসে যখন একটু থিতু হওয়ার সময়, তখনই রজোনিবৃত্তি নতুন সঙ্কট ডেকে আনে। শরীর ও মনের নানা পরিবর্তনের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে সংসার ও পেশা সামলানো যথেষ্টই কঠিন হয়ে পড়ে। কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারা তাঁদের রজোনিবৃত্তির পর্যায়ে এসে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন অহরহ। সঙ্কোচের কারণে তা মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না অনেকে। ফলে লড়াইটা চলছে নীরবেই।

Advertisement

কলকাতা-সহ সাতটি শহরের প্রায় ১২০০ মহিলাকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। প্রত্যেকেই তাঁদের রজোনিবৃত্তির পর্বে ছিলেন। দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৮১ শতাংশ মহিলা রজোনিবৃত্তির পর্যায়ে এসে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যার কারণে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে পারেন না, ৭৩ শতাংশ ঘন ঘন ছুটির আবেদন করেন, ৬৬ শতাংশ মানসিক নানা সমস্যার কারণে হেনস্থার শিকারও হচ্ছেন। ফলে পেশাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে দিয়ে তাঁরা যাচ্ছেন।

এই সব সমস্যার মূল কারণই হল সচেতনতার অভাব। এমনটাই জানাচ্ছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাবট ইন্ডিয়ার মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান রোহিতা শেট্টি। তাঁর কথায়, “রজোনিবৃত্তি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে চান না অনেক মহিলাই। বয়স হয়ে যাওয়া, দেখতে খারাপ হয়ে যাওয়া, সঙ্গীর কাছে আকর্ষণ হারানোর মতো দুশ্চিন্তা বহু মহিলাকে চূড়ান্ত অবসাদ ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ঠেলে দেয়। কেমন কাউন্সেলিং দরকার, তা নিয়ে অধিকাংশেরই সচেতনতা নেই। ফলে সমস্যা বাড়ছেই।” এর থেকে রেহাই পেতে অনেকেই বাড়াবাড়ি রকমের হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, অ্যান্টি-ডিপ্রেস্যান্ট ট্যাবলেট বা নেশার দ্বারস্থ হয়ে পড়েন। এই বিষয়ে একমত, কলকাতার একটি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক নির্মলা পিপারাও। তাঁর পরামর্শ, চল্লিশের পরেই নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া, ব্যায়াম, জীবনযাত্রা ও কাউন্সেলিং রজোনিবৃত্তি পর্বে এসে লড়াইটা অনেক সহজ করে দেয়। মহিলাদের নিজের খেয়াল রাখতেই হবে। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যাওয়াও জরুরি। শারীরিক কী কী সমস্যা হচ্ছে, তা মুখ ফুটে বলতেও হবে।

রজোনিবৃত্তি পর্বে ভাল থাকার কিছু উপায়

সমস্যার কথা বলুন

ব্যক্তিগত জীবনে হোক বা কর্মক্ষেত্রে, কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে তা বলতেই হবে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়ে সহকর্মীরাও সহযোগিতা করতে পারেন। রজোনিবৃত্তির আগে ও পরে মেয়েদের শ্বাসকষ্ট, গরম লাগা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। সেই সঙ্গেই অবসাদে ভোগেন অনেকেই। এমন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। জানাতে হবে আপনজনদেরও।

কাজের পরিবেশ

কাজের পরিবেশ যাতে সহজ ও আরামদায়ক হয়, সেই চেষ্টা করতেই হবে। যেমন, রজোনিবৃত্তির পরে আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন, সে বিষয়ে আগেই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিন। আপনার সুবিধামতো কাজের সময় বেছে নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কথা বলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি

রজোনিবৃত্তি বা ‘মেনোপজ়’-এরও কিন্তু তিনটি পর্যায় রয়েছে। ‘পেরিমেনোপজ়’, ‘মেনোপজ়’ এবং ‘পোস্টমেনোপজ়’। প্রতিটি পর্বেই মহিলাদের নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই সময়ে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য শুরু হয়। ফলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, অস্ট্রিয়োআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে, এমনকি চেহারাও মেদবহুল হয়ে ওঠে অনেকেরই। তবে সকলের উপরেই যে একই রকম প্রভাব পড়ে, তা নয়। তবে লক্ষণ যেমনই দেখা দিক না কেন, তা চিকিৎসককে জানাতে হবে। অনেকেই বলেন রাতে শোয়ার পর দরদর করে ঘাম হয়, যখন তখন শ্বাসকষ্ট হয়, বুকে ব্যথাও হয়। এই সব সমস্যার কথা লুকিয়ে গেলে পরে বিপদ হতে পারে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করান। নিজে থেকে ওষুধ খাওয়ার চেষ্টাও বিপদ ডেকে আনতে পারে।

স্ক্রিনিং টেস্ট জরুরি

রজোনিবৃত্তির পর ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো দরকার। এতে কোনও রোগ বাসা বাঁধছে কি না, তা ধরা পড়বে।

পেলভিক পরীক্ষা করালে ভাল। মহিলাদের যোনি, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বাশয়ে কোনও রকম সংক্রমণ থাকলে তা বোঝা যাবে।

জরায়ুমুখে টিউমার হচ্ছে কি না তা বুঝতে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করিয়ে রাখাও জরুরি।

তবে এ সমস্ত কিছু করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।

Advertisement
আরও পড়ুন