ফিটনেস সচেতন বলে টলিপাড়ায় পরিচিত অর্জুন চক্রবর্তী। ছবি: অর্জুন চক্রবর্তীর ফেসবুক থেকে।
কেউ চান ওজন বাড়াতে, কেউ চান ওজন কমাতে। কেউ আবার চান পুজোর আগে প্রিয় তারকার মতো সুঠাম হোক পেশি। সব মিলিয়ে পুজোর আগে পছন্দসই চেহারা পেতে হঠাৎ জিমে যেতে শুরু করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আচমকা শরীর বদলে ফেলার এই ঝোঁক কতটা ঠিক? ফিটনেস সচেতন বলে টলিপাড়ায় পরিচিত অর্জুন চক্রবর্তী পুজোর আগে জিমযাত্রার এই প্রবণতা নিয়ে মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনে।
পুজোর রাস্তায় প্রিয়জনের সামনে ‘দর্শনধারী’ হতে সাধ হয় অনেকেরই। কারও আবার ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকে ছবি দেওয়া চাই-ই চাই। ভক্তদের অনেকেই তাঁর চেহারা দেখে অনুপ্রাণিত হন। নিজেকে ফিট রাখার রহস্য কী? নিজেকে ফিট রাখতে ঠিক কী ধরনের শরীরচর্চা করেন অর্জুন? তারকা জানান, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি স্ট্রেনথ ট্রেনিং করতে ও ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন। তবে তিনি করেন বলেই অন্যদেরও এ ধরনের ব্যায়াম করতে হবে, তার কোনও মানে নেই বলে জানান অভিনেতা। অর্জুন বলেন, “আমাকে বা যে কোনও তারকাকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া খুবই ভাল। কিন্তু তাই বলে অমুকের মতো হতে হবে, এমন ভাবনা মাথা থেকে মুছে ফেলা জরুরি। ঠিক যেমন দু’জন মানুষের আঙুলের ছাপ এক হয় না, তেমনই সকলের শারীরিক গঠন এক রকম নয়।” যাঁরা সদ্য শরীরচর্চা শুরু করছেন, তাঁদের জন্য অর্জুনের পরামর্শ, “সিক্স প্যাক মানেই ফিটনেস নয়।” আগে বুঝতে হবে নিজের শরীরের গঠন। কোনও তারকার মতো পেশি না তৈরির চেষ্টা করে নিজের শারীরিক গঠন অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে।
শরীরচর্চা মানেই যে জিমে যেতে হবে, এমন নয়। নিয়মিত খেলাধুলো করাও শরীরচর্চার অংশ হতে পারে বলে মত অর্জুনের। “কেউ হয়তো জীবনে কোনও দিন জিমে যাননি। কিন্তু রোজ নিয়ম করে সাঁতার কাটেন। সেটাও শরীরের জন্য উপকারী,” বলেন অর্জুন। তবে যে যা-ই করুন, তা হঠাৎ করলে হবে না। শরীরচর্চাকে জীবনযাপনের অঙ্গ হিসাবে দেখতে হবে। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে বলে সতর্ক করেন অভিনেতা।
পুজোর আগে জিমে প্রচুর ভিড় দেখা যায়। ‘‘শুধু বাইসেপসের কাছে জামাটা যেন একটু আঁটসাঁট হয়, তার জন্য এক মাস ডাম্বেল তুলে লাভ নেই,” সাফ জানালেন অর্জুন। বরং সারা বছর সপ্তাহে অন্তত তিন দিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেন তিনি। কোনও কোনও দিন শরীরচর্চা করতে ইচ্ছা করে না একেবারেই। মনে হতে পারে ঘুমটা বোধ হয় ভাল হয়নি। সম্ভব হলে সে দিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করার পরামর্শ দিলেন অর্জুন। যে ব্যায়ামটি করতে ভাল লাগে, সেটিই করতে হবে। পুজোর আগে আচমকা সাংঘাতিক কিছু করার চেষ্টা করলে চোট লাগতে পারে। বরং শরীরচর্চাকে জীবনযাত্রার অংশ হিসাবে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
তা হলে তারকারা বিভিন্ন ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেন কী ভাবে? অর্জুন বলেন, “আমাদের এখানে একটি ছবির জন্য নিজেকে একেবারে আমূল বদলে ফেলার খুব একটা সুযোগ থাকে না। চরিত্র অনুযায়ী অল্প কিছু বদল করতে হয়। সে ক্ষেত্রে শরীরচর্চার থেকেও বেশি কাজে আসে খাওয়াদাওয়া। যেমন ‘অভিযাত্রী’ ছবিটি করার সময়ে একটু ছিপছিপে শরীর দরকার ছিল, আবার সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করতে দরকার ছিল একটি সুঠাম চেহারা।” ওজন বাড়ানো বা কমানো, যে কোনও ক্ষেত্রেই শরীরচর্চার পাশাপাশি, উপযুক্ত ডায়েটের কথা বলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা। অর্জুনের গলায় একই সুর। কিন্তু পুজো মানে তো দেদার পেটপুজোও বটে? যাঁরা নিয়ম মেনে লাগাম টেনেছেন জিভে, তাঁরা কি এ সময়েও মুখ ফিরিয়ে থাকবেন খাবার থেকে?
অর্জুনের সাফ কথা, কেউ যদি সারা বছর নিয়ম মেনে চলেন, তবে পুজোর পাঁচ দিন পছন্দের কিছু খাবার খেলেও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। “পুজোয় যদি প্রিয়জনের সঙ্গে ফুচকাই না খেতে পারি, তবে আর এত জিম করে লাভ কী,” বক্তব্য অর্জুনের। বাড়ির লোকের সঙ্গে এক দিন বিরিয়ানি খেলে কিংবা এক টুকরো কেক খেলেই ভুঁড়ি বেড়ে যাবে, এ ধারণার কোনও মানে নেই বলেও বক্তব্য তাঁর।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফিটনেস নিয়ে এ ধরনের ভ্রান্তির কারণ, বহু মানুষই না জেনে কথা বলেন ফিটনেস নিয়ে। তিনি নিজেও বিভিন্ন সময়ে ফিটনেস সংক্রান্ত বহু ভুলভাল কথা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। অর্জুন বলেন, “শুনেছিলাম বড় তারকারা নাকি খাবারে নুন দেন না, এমনকি খালি গায়ে শট দেওয়ার আগে জল পর্যন্ত খান না। কেউ তো আর খেতে বসে বাটি বাটি চিনি বা বাটি বাটি নুন খান না। বাঙালি রান্নার যেটুকু নুন দেওয়া হয়, সেটুকু নুন খেলে শারীরিক গঠন বিগড়ে যাবে, এটা একেবারেই বাজে কথা।” এই ধরনের কথা বলে শুধু শুধু মানুষকে ভয় দেখানো হয়। সাধারণ বাঙালি খাবার খেয়েও সুঠাম দেহ পাওয়া সম্ভব বলেও মত তাঁর। তবে অর্জুন জানান, যাঁরা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করেন বা একটু পেশিবহুল চেহারা চান, তাঁদের প্রোটিন বেশি খেতে হবে।
পুজো এলে ফিট হতে চাওয়ার মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু হঠাৎ কোনও কিছুই সম্ভব নয়, মাথায় রাখতে হবে সে কথা। কাজেই শুধু পুজোর কথা মাথায় রেখে নয়, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগুণের কথা মাথায় রেখে ফিটনেস প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে শরীরচর্চা শুরু করে দীর্ঘ দিন তা ধরে রাখাই কাজের কাজ বলে মত অভিনেতার।