ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের ‘ডায়াবেটিক ফুট আলসার’-এর ঝুঁকি থাকে। প্রতীকী ছবি।
ডায়াবিটিস নিয়ে নাজেহাল অনেকেই। ‘ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবিটিস ফেডারেশন’-এর হিসাব অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ডায়াবিটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় কয়েক লক্ষ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৯ শতাংশ মানুষ ডায়াবিটিসে ভুগছেন। ‘ডায়াবেটিক ফুট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র হিসাবে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের ‘ডায়াবেটিক ফুট আলসার’-এর ঝুঁকি থাকে। পা ঘেমে যাওয়া, লালচে ভাব, পায়ের চাম়ড়া থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে আসা, দুর্গন্ধ বার হওয়া— এমন কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায় এ ক্ষেত্রে।
এ দেশে তো বটেই, ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দেশেও প্রতি বছর ডায়াবিটিসের রোগীদের ১০-১৫ শতাংশের পায়ে আলসার হয়। এই কারণে ডায়াবিটিস হলে পায়ের বিশেষ যত্নের দরকার বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘ দিন রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে স্নায়ুকোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে নিউরোপ্যাথি।
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে পায়ের আলসারের পিছনে রয়েছে ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’। হাইপারগ্লাইসিমিয়া অর্থাৎ রক্তের বাড়তি শর্করা এবং মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে স্নায়ুকোষের প্রোটিন ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদান গ্লাইকোজেনকে অস্বাভাবিক ভাবে ভেঙে দেয়। এর ফলে স্নায়ুকোষের প্রোটিন কাইনেজ-সি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে না। স্নায়ুকোষ এলোমেলো ভাবে কাজ করতে করতে ক্রমশ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ক্রনিক ডায়াবিটিস রোগীদের পায়ের স্নায়ুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পায়ের পেশি, হাড়, ত্বক একে একে সবই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।
ডায়াবিটিসের সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বেশি থাকলে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ধূমপান করলেও রক্তবাহী ধমনীর মধ্য চর্বি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই পায়ের বিশেষ যত্ন না নিলে ‘ডায়াবেটিক ফুট আলসার’-এর সমস্যা বেড়ে যায়।
‘ডায়াবেটিক ফুট আলসার’ থাকলে কেমন হবে পায়ের বিশেষ যত্ন?
১) ডায়াবিটিস থাকলে পায়ের নখ বড় হতে দেবেন না। কেটে ছোট করে রাখতে হবে। প্রতি দিন বাড়ি ফিরে অল্প গরম জলে পা ডুবিয়ে রেখে মৃদু সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নারকেল বা ক্রিম লাগিয়ে নরম করে রাখতে হবে।
২) খালি পায়ে হাঁটা একেবারেই ঠিক হবে না। আঁটসাঁট জুতো না পরাই ভাল। হালকা খোলামেলা জুতো পরুন।
৩) রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পায়ের তলা এবং আঙুলের ফাঁকে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার মেখে নিন। উপকার পাবেন।
৪) ‘ডায়াবিটিক ফুট আলসার’ হলে অনেক সময় পায়ে সাড় থাকে না। তেমন হলে পা সেঁকে নিতে পারেন।